ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুরুস্কুল-চৌফলদন্ডীতে চিংড়িতে মার খাওয়া চাষীরা কাকড়ায় ঝুঁকছে!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কাকড়ার দাম বিদেশী বাজারে বেশি হওয়ায় কাকড়ায় চাষে ঝুঁকছে চাষীরা। কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুল-চৌফলদন্ডীতে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বাগদা ও গলদা চিংড়ি। কয়েক বছরে গলদা চিংড়ির দাম কমেছে ৫০ শতাংশের ওপরে। বিভিন্ন প্রকার মহামারি রোগে শেষ হচ্ছে বাগদা। এদিকে মৃত্যুহার কম ও দাম বেশি হওয়ায় কাকড়া চাষে ঝুকছে চাষীরা। খুরুস্কুল-চৌফলদন্ডীতে সাধারণত কাকড়ার দুই ধরণের চাষ হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে পুরুষ কিশোর কাকড়া (ছোট কাকড়া) ছেড়ে বড় করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক (প্রি ম্যাচিউরড) মা কাকড়া ঘেরে ছেড়ে পূর্ণবয়স্ক (পেটে বেশি ডিম হওয়ার পরে) করে বিক্রি করা।

সোনাদিয়া থেকে কাকড়ার পোনা সংগ্রহ করে বক্স পদ্ধতি ও ঘেরে পাটা দিয়ে দুই পদ্ধতিতেই কাকড়ার চাষ করে থাকে চাষীরা। কাকড়াকে সাধারণত স্থানীয়ভাবে কিছু কম দামের সামুদ্রিক মাছ, শামুক ও ঝিনুকের নরম অংশও খাওয়ানো হয়ে থাকে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় শতাধিক কাকড়া ঘের গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে টেকনাফ,মহেষখালী, চকরিয়া ও সদরের খুরুস্কুল-চৌফলদন্ডীতে সব থেকে বেশি কাকড়ার চাষ হচ্ছে। এ দু’ইউনিয়নে ডজনাধিক ঘেরে চাষীরা কাকড়া চাষ করছে।

বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাগদার সিজন। এসময় বাগদার দাম অনেক ভাল থাকে। এছাড়া, বিদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে চাইনিজ ডে নামে একটি উৎসবে কাকড়ার প্রচুর চাহিদা থাকে। তখন প্রতি কেজি কাকড়া ২৫‘শ থেকে ২৮‘শ টাকা দামে বিক্রয় করা হয়।

সদর উপজেলার খুরুস্কুলের কাকড়া চাষীরা বলেন, বাগদার চাষ করে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়, কখন ভাইরাসে আক্রমন করে। কিন্তু কাকড়া চাষে এ ধরণের তেমন কোন ঝুঁকি নেই। তাই ২০১৫ সাল থেকে বর্গা জমিতে দুই সার্কেল কাকড়া চাষ করে বছরে ভাল লাভ হচ্ছে।

সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, কৃষকরা স্বল্প পূঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলায় অনেকেই কাকড়া চাষে ঝুকছে। কাকড়া চাষকে উৎসাহ যোগাতে উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় এদেরকে কাকড়ার পোনা ও খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া চাষীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাগদা চিংড়িতে রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাগদা চাষে অনেক ঝুকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া বহির্বিশ্বে বড় গলদা চিংড়ির দাম কমায় গলদা চাষীরাও লোকসানে পড়ছে। যার ফলে অনেক চাষী বানিজ্যিকভাবে কাকড়া চাষ শুরু করেছে। কাকড়া চাষ ও গবেষনা প্রকল্পের আওতায় চিংড়ির পাশাপাশি চাষীদের কাকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করি। প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রদর্শনী খামার, কাকড়া চাষ বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষন প্রদান করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, কাকড়া চাষ লাভজনক। কারণ রোগ বালাইয়ে কাকড়ার মৃত্যু হার কম, স্বল্প পূজিতে চাষের সুবিধা এবং চিংড়ির তুলনায় দাম বেশি। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় শতাধিক কাকড়া ঘের গড়ে উঠেছে।

কাকড়া চাষের কিছু ঝুকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাকড়ার পোনার জন্য প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। সোনাদিয়া থেকে পোনা সংগ্রহ করে চাষ করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী সব সময় চাষীরা পোনা পায় না। এছাড়াও বর্তমানে কাকড়ার কিছু রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। আমরা কাকড়া নিয়ে গবেষনা করছি। চেষ্টা করছি এসব রোগ বালাইয়ের কারণ জানতে এবং রোগ বালাইয়ের ঔষধ আবিস্কার করতে।

পাঠকের মতামত: