ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই জরুরি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ১৭ ইউনিয়নে স্থাপিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের কার্যক্রম একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনটিতেই মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। এতে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের নেওয়া মহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
শুধু তাই নয়, কোন কোন ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। আবার কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গবাদী পশু পালনে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। এতে প্রত্যন্ত এলাকার বিপন্ন রোগীরা চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় উপজেলা সদরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসতে বাধ্য হচ্ছে বিপন্ন মানুষগুলোর।
সরজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ছিটমহল হিসেবে খ্যাত বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন। এখনো পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায় মাতামুহুরী নদী পথে বা বান্দরবানের লামা উপজেলা হয়ে বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের মানুষ চকরিয়া উপজেলা সদরে আসেন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত ছিটমহলখ্যাত এই ইউনিয়নের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রায় একযুগ আগে এখানে স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রটি। বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন আ’লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুস সবুর চকরিয়া নিউজকে জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি তালাবদ্ধই রয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্যও খোলা হয়নি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এখানে একজন করে উপ-সহকারি মেডিক্যাল অফিসার, প্যারামেডিক্যাল এবং ভিজিটর দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও এদের কেউই এই সময়ের মধ্যে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেননি।
আবদুস সবুর হতাশার সুরে বলেন, ‘দোতলা বিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে নানা সুযোগ-সুবিধাদি থাকার পরও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা এখানে না আসায় ভবনটিও দিন দিন হতশ্রী হয়ে পড়ছে। বাইরের কলাপসিবল গেটে তালাবদ্ধ থাকায় এর সামনে স্থানীয় লোকজন গবাদী পশু তথা গরু, ছাগল পালন করা শুরু করেছেন।’
ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি মো. কফিল উদ্দিন অভিযোগ করে চকরিয়া নিউজকে বলেন, জনমদুঃখী বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের দোরগোড়ায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল বর্তমান সরকারের আমলেই।
প্রথমদিকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন বিপন্ন মানুষ চিকিৎসা নিতে ভিড় করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার কয়েকবছর না যেতেই এতিমের মতো হয়ে পড়ে থাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এ কারণে সাধারণ মানুষকে জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে হলে দীর্ঘ মাতামুহুরী নদীপথ বা বান্দরবানের লামা উপজেলা হয়ে চকরিয়া উপজেলা সদরে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতে মাঝপথেও অনেক বিপন্ন রোগী তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা পড়েন। এনিয়ে জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অতিদ্রুত বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম পুনরায় চালু দেখতে চাই। যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্থাপন করেছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। এতে করে বর্তমান সরকার যে সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেন তার দৃষ্টান্ত দেখবেন ভুক্তভোগী ও বিপন্ন মানুষগুলো।’
একই অবস্থা উপজেলার আরো কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও। অবশ্য কোন কোন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ভাল স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন মানুষকে।
অবশ্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোর তদারকের দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমি দাশ বলেন, ‘একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রও বর্তমানে বন্ধ নেই।
সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন কার্যক্রম চালু রয়েছে। যারা এসব বানোয়াট কথা বলছেন এসবের কোন ভিত্তি নেই।’
তাহলে বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পাঁচ বছর ধরে তালাবদ্ধ এবং সামনে গবাদী পশুর লালন-পালন কিভাবে করছে এমন প্রশ্নে ডা. সুমি দাশ বলেন, ‘ওখানে কোন ভিজিটর সরকার নিয়োগ দেয়নি। তাই সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ভিজিটর বিবি মরিয়ম সপ্তাহের মঙ্গলবার বমু বিলছড়ি স্বাস্থ্য  কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা দেন।’ তবে এই তথ্যের কোন সত্যতা নেই বলে জানালেন বমু বিলছড়ির মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিধান রুদ্রের সঙ্গে। তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার জরুরি স্বাস্থ্য  সেবাকে সাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে একজন করে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করেছিল। কিন্তু এসব ডাক্তার প্রত্যন্ত এলাকায় দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করে অন্যত্র বদলী হয়ে যান। এ কারণে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যসেবায় সঠিক গতি ফিরছে না।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে একজন করে নিয়মিত এমবিবিএস ডাক্তার দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে মাত্র ১১জন ডাক্তার। তন্মধ্যে তিনজন হচ্ছেন মেডিক্যাল অফিসার। এতবড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৯ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। সেখানে মাত্র রয়েছে ১১জন ডাক্তার। তাহলে কিভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে ডাক্তার দায়িত্ব পালন করবেন।’অবশ্য তিনি জানান, অচিরেই প্রায় ৭ হাজারের মতো নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। হয়তো তখন এই সমস্যা থাকবেনা। এজন্য আগে থেকেই আমাদের পক্ষ থেকে এনিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: