ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তিন হাজার এনজিও গায়েব!

নিউজ ডেস্ক ::
বেকারত্ব দূরীকরণ, ঋণ প্রদান, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা ও বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের জীবনমান উন্নয়নসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজের কথা বলে একের পর এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (এনজিও) নিবন্ধন নিয়েছিল।

কিন্তু এসব এনজিও সংস্থার তিন হাজারই গায়েব চট্টগ্রামে। এদের নেই কোনো অফিস ও ঠিকানা। নেই মাঠ পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম। শুধু সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন তালিকায় আছে এসব এনজিও সংস্থার নাম। বছরের পর বছর হদিস না থাকলেও এসব সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করছে না সমাজসেবা অধিপ্তর।

শুধু তাই নয়, প্রতি অর্থ বছরে এসব এনজিও সংস্থার আর্থিক কার্যক্রম নিরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা করছে না সমাজসেবা অধিদপ্তর। বরং এসব এনজিও সংস্থার কোন কোনটির প্রকল্পের নামে প্রতিবছর সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নানা কৌশলে তা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৯৫৯টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও এখন শুধুই নামসর্বস্ব।
এসব সংস্থার বেশির ভাগেরই কোনো ঠিকানা বা কার্যক্রম নেই। নিয়ম থাকলেও এসব সংস্থার আর্থিক কার্যক্রমের কোনো নিরীক্ষা হয় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব সংস্থার নামে প্রকল্প বরাদ্দ দেখিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পক্ষান্তরে সক্রিয় এনজিও সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিভাগীয় সমাজসেবা অফিসের পরিসংখ্যানেও গায়েবী এসব সংস্থার তালিকা পাওয়া গেছে। তবে তা নিষ্ক্রীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অফিস বা ঠিকানা খোঁজে না পাওয়ার কথা অফিসের লোকজন মুখে স্বীকার করলেও এ সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ এই দায়ভার চাপিয়ে দেন জেলা-উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের ওপর। তিনি বলেন, এনজিওগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে জেলা-উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। তথ্যে অসংগতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো এনজিওর নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাবের ওপর আমরা শুনানি করছি। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। নিস্ক্রীয় এনজিওগুলোর নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ ও স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধি, ১৯৬২ অনুযায়ী এনজিওগুলোর নিবন্ধন দেয়া হয়। ইতোমধ্যে নিবন্ধন নিয়ে অনেক এনজিও গায়েব হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে ৯ হাজার ৬১৬টি। এরমধ্যে নিস্ক্রীয় রয়েছে ২ হাজার ৯৫৯টি। বাকি ৬ হাজার ৬৫৭ সংস্থা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি নিস্ক্রীয় নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। জেলায় নিবন্ধিত ৩ হাজার ১৬৮ সংস্থার মধ্যে ৮২৮টি নিস্ক্রীয়।

এছাড়া কক্সবাজার জেলায় ৫০, রাঙামাটিতে ৫৫, খাগড়াছড়িতে ১০২, বান্দরবানে ৫১, নোয়াখালীতে ৪২৪, ফেনীতে ২৬৬, লক্ষ্মীপুরে ১০০, কুমিল্লায় ৩৮১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮৫ ও চাঁদপুরে ৩১৭টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিস্ক্রীয় হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে অনেক সংগঠন-সমিতি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেক এনজিওর মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম না থাকলেও প্রকল্প বরাদ্দ পাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক এনজিওর কোনো খোঁজ খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক এনজিও কী কাজ করে, কবে নিবন্ধন নিয়েছিল, সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য নেই। শুনানির জন্য নোটিশ দিলে উপস্থিত হয় না তারা।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সুতরাং সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই।
আর মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে নিস্ক্রীয় এনজিওর পক্ষে বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।

কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরে পরিচালিত এনজিও সংস্থা ঘাসফুলের এক কর্মকর্তা জানান, সমাজসেবা থেকে ক্লাব, সমিতি ইত্যাদি সংগঠন নিবন্ধন নেয়। এসব সংগঠন ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রকল্প বরাদ্দ নিতে নানা তদবির করছে।
তিনি জানান, নিস্ক্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে হয়তো কয়েকটা এনজিও রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্লাব, সমিতি এসব। কর্তৃপক্ষের উচিত, ঢালাওভাবে সবগুলোকে এনজিও না বলে অবকাঠামো ও কার্যক্রম অনুযায়ী কোনটি এনজিও কোনটি সংগঠন-সমিতি নির্ধারণ করে দেয়া। এতে করে অনিয়মের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

পাঠকের মতামত: