ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে জিম্মি করে দেহব্যবসায় বাধ্য করায় যুবজোট নেতার বিরুদ্ধে মামলা

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার শহরের লালদীঘি পাড়ের বহুল আলোচিত ‘মিনি পতিতালয়’ খ্যাত ‘হোটেল পাঁচতারা’য় নারীদের জিম্মি করে দেহব্যবসায় বাধ্য করাতেন জাসদ যুবজোট নেতা রমজান আলী সিকদার। গত এক মাসে দুই দফায় তার হোটেলে অভিযান চালিয়ে কয়েক ডজন পতিতা ও খদ্দের আটক করার পর পুলিশ উক্ত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা রুজু করেছে। মামলার পর ওই জাসদ নেতা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

অভিযুক্ত রমজান আলী সিকদার জাসদের সহযোগী সংগঠন যুবজোট কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি।

মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়েরকৃত উক্ত মামলার অভিযোগে বলা হয়, অপরাধ দমনে পুলিশ শহরে নিয়মিত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে মঙ্গলবার গভীর রাতে সদর থানার পৃথক টিম দীর্ঘদিন ধরে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ থাকা লালদিঘীর পাড়ের পাঁচতারা হোটেল ও কলাতলীর কটেজ জোনের মেঘালয় হোটেলে অভিযান চালায়। অভিযানে হোটেল পাঁচতারা থেকে ৬ নারী ও ২ পুরুষকে আটক করা হয়। এ সময় ২০০টি কনডমও জব্দ করে অভিযানকারীরা।

অপরদিকে, মেঘালয় হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৭ নারী ও ৩ পুরুষকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ৪১০টি কনডম।

মামলার আর্জিতে আরো উল্লেখ করা হয়, পলাতক আসামি রমজান আলী সিকদার তার মালিকানাধীন পাঁচতারা হোটেলটি মিনি পতিতালয় বানিয়ে নারী রেখে অবাধে পতিতাবৃত্তি চালিয়ে আসছেন। একইভাবে ঢাকা, কুমিল্লা ও রামুর কয়েকজনের সহযোগিতায় কলাতলীর মেঘালয় হোটেলকেও মিনি পতিতালয় বানিয়েছে ভাড়াটিয়া ইউসূফ। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২০১২ এর ১২/১৩ ধারার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব চন্দ্র পোদ্দার বাদী হয়ে করা এ মামলায় ১২ নারীসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে নথিভুক্ত হওয়া মামলায় (নম্বর-১০৩/২০১৮) অভিযুক্ত ১৭ জন গ্রেফতার হলেও হোটেল মালিকদ্বয় পলাতক রয়েছে।

গ্রেফতাররা হলেন কুমিল্লার দেবিদ্বার ধামতলীর শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে আলাউদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজারের রামুর শ্রীমুরার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আজিম, কুমিল্লা দাউদকান্দির বেকিনগর এলাকার মৃত রুস্তম আলী বেপারির ছেলে আবু সাহিদ, গাজীপুরের পুবাইল এলাকার আলী আকবরের ছেলে মোহাম্মদ আতিক, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সালাহউদ্দিন।

মামলায় পলাতক আসামিরা হলেন কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর দক্ষিণপাড়ের পাঁচতারা হোটেলের মালিক ও জাসদ নেতা রমজান আলী সিকদার এবং কলাতলী কটেজ জোনের মেঘালয় আবাসিক হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক কক্সবাজার পৌরসভার লাইট হাউসপাড়ার ইউসুফ।

মামলার বাদী এসআই রাজীব চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ‘অভিযানকালে দেখা গেছে পাঁচতারা হোটেলটি আদালত পাড়া লাগোয়া। হোটেলটির পূর্বকোণ ঘেঁষে করা চলাচল পথে ডজন খানেক ভাড়া দোকান রয়েছে। মাঝখানেই হোটেলটির প্রবেশপথ। হোটেলের অফিসের টয়লেটের ভেতর বাড়ির সঙ্গে একটি গোপন পথ পাওয়া গেছে। বাড়িতেই নারী রেখে গোপন পথ দিয়েই খদ্দেরের কাছে সরবরাহ করার প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়াও আরও কয়েকটি গোপন পথ রয়েছে বলে খবর পেয়েছি।’

মামলাটি সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রমজান সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুরনো। এটি তাদের পরিবারের পুরনো ব্যবসা। অপরাধ আড়াল করতেই জেলা জাসদে যোগ দিয়েছিল রমজান। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাকে জাসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর যুবজোটের কমিটি এনে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে সে। সাম্প্রতিক মামলাটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। ডকুমেন্টগুলো একত্র করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

তবে, জেলা যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার হিমুর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মামলাটি ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে তা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়।

পাঠকের মতামত: