ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা : বিপজ্জনক বাঁক সোজা করা জরুরি

অনলাইন ডেস্ক ::  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। ফলে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে সবাই। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সকলকে। শুধুমাত্র একদিনের ব্যবধানে দুর্ঘটনায় অকালেই ঝরে গেছে চার নারীসহ ১১ জনের প্রাণ। আহত হয়েছে শিশু, নারীসহ ১৪ জন। যেন মৃত্যু ফাঁদ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশি–বিদেশি পর্যটকসহ হাজার হাজার যাত্রী–সাধারণ যাতায়াত করে থাকেন, সেই সড়কে প্রতিনিয়ত চলছে এখন মৃত্যুর হাতছানি।বিভিন্ন জাতীয়/আঞ্চলিক দৈনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল একেবারে নিষিদ্ধ করলেও তা মানছেন না সংশ্লিষ্টরা। সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক টমটম, মাহিন্দ্রসহ আরো হরেক রকমের ত্রি–হুইলার বাহন। এমনকি লেগুনা–ছারপোকার মতো ৪ চাকার ছোট যানবাহনগুলো মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও পাল্লা দিয়েই যাত্রী আনা–নেওয়া করছে প্রতিদিন। মহাসড়কে এ ধরনের ছোট যানবাহন চলাচল একেবারে নিষিদ্ধ এবং আইন অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য মহাসড়কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে এই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না হাইওয়ে পুলিশ। প্রতিদিন মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। মূলত ছোট যানবাহনগুলো মহাসড়কে উঠার কারণেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়িত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ২৯ কিলোমিটার অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নিয়োজিত রয়েছে বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা এবং মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। এছাড়াও চিরিঙ্গা সদরের জন্য রয়েছে থানা ট্রাফিক সার্জেন্টের নেতৃত্বে পুলিশ। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্টরা দায়সারা দায়িত্ব পালন এবং সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন না করায় মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে। তাদের অভিযোগ, ফাঁড়ির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মহাসড়কে ছোট যানবাহনগুলো চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করলেও অধস্তন কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তা না হলে সরকারের কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও কিভাবে ছোট যানবাহনগুলো মহাসড়কে উঠতে পারে। এজন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার প্রায় ৩৬ কিলোমিটার অংশের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে বিপজ্জনক বাঁক (মোড়) রয়েছে। তন্মধ্যে বেশি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে অন্তত ১০টি। এসব বিপজ্জনক মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দৃশ্যমান নেই কোন সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বা নির্দেশনা। এতে যে কোন যানবাহন মোড় ঘুরতেই বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা অপর যানবাহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (৯৬ সালের পর) চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এই মহাসড়কটি একেবারে সোজা করার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী ম্যাপও চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি আমলে এই সড়ক নির্মাণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত কাজ বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পায় একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি একেবারে সোজা সড়ক নির্মাণের পরিবর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রেখে সড়কটি নির্মাণ কাজ সম্পাদন করে। এর পর থেকেই শুরু এই মহাসড়কের চকরিয়া অংশে মৃত্যুর মিছিল।

সে জন্য বিপজ্জনক বাঁক সোজা করাই হলো অন্যতম প্রধান কাজ। বলতে অসুবিধা নেই যে, নামে মহাসড়ক হলেও চট্টগ্রাম–কঙবাজার সড়কটি আসলেই একটি গ্রাম্য সড়কপথ– যার বাঁকে বাঁকে আছে মৃত্যুঝুঁকি। ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কের চকরিয়া অংশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি। শাহ আমানত সেতু থেকে শুরু করে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি পর্যন্ত যে বাঁক রয়েছে, সেগুলোও কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে, এই অংশে রাস্তার দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, হ্লাট–বাজার, দোকানপাট, বসতি, বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড, গাড়ির গ্যারেজ, অবৈধ পার্কিং ইত্যাদি। কক্সবাজারে বছরে লাখ লাখ পর্যটক বেড়াতে আসেন। কিন্তু সড়কের ভোগান্তির কারণে কারো যাত্রাপথ সুখকর হয় না। বিপজ্জনক বাঁকের কারণে প্রতি মাসে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই এই সড়ককে প্রকৃত অর্থে মহাসড়ক হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি।

পাঠকের মতামত: