ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গাস্থ ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণযজ্ঞ শুরু হতে আর বেশিদিন বাকী নেই। ইতোমধ্যে এই সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ব্যক্তির মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদেরকে ৪ ধারায় নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। এরপর মাঝখানে ৬ ধারার নোটিশ এবং সর্বশেষ ৭ ধারার নোটিশ তথা ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ চেক হস্তান্তর পরবর্তী আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যমান হবে বহুল প্রতীক্ষিত এই ছয় লেনের সেতুর নির্মাণযজ্ঞ।

চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের তালিকা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এই সেতুটি তিনটি মৌজার জমির ওপর দিয়ে নির্মিত হবে। তম্মধ্যে চিরিঙ্গা, কাকারা (হালকাকারা অংশ) ও লক্ষ্যারচর মৌজার জমি পড়েছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর ওপর নির্মিতব্য ছয় লেনের সেতুর জন্য যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হবে তা সরেজমিন সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাণ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নপূর্বক জেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

সে অনুযায়ী তিন মৌজার ১৩০টি খতিয়ানভুক্ত প্রায় ৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।’

ভূমি অধিগ্রহণের নোটিশ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চিরিঙ্গা মৌজার ভূমি মালিক আজিজুল হক লিটন। তিনি বলেন, ‘জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে কয়েকদিন আগে প্রাথমিক (৪ ধারার) একটি নোটিশ আমাদের হস্তগত হয়েছে। কিন্তু আমাদের পৈতৃক এই ভূমি ছেড়ে দিতে হলে আমরা একেবারে দেউলিয়া হয়ে পড়ব। মূলত আমাদের পুরো বাড়ি–ভিটের ওপর দিয়েই এই সেতু সম্প্রসারণ হচ্ছে। এর পরও দেশের স্বার্থে অপূরণীয় এই ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে আমরা যেন যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাই সেজন্য সরকারের আন্তরিক সহায়তা কামনা করছি।’

উল্লেখ্য, ব্যস্ততম চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী, পটিয়ার ইন্দ্রপুল, চন্দনাইশের বরগুনি ও দোহাজারির সাঙ্গু সেতুর নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)। এসব সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই চার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৮ কোটি টাকা। আর ইতোমধ্যে ঠিকাদারও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের সহকারি প্রকৌশলী আবু এহেছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর আওতায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেনের এই চারটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে অন্য তিনটি সেতুর কাজের অগ্রগতির তথ্য আমার কাছে না থাকলেও মাতামুহুরী সেতুর ছয় লেনের নির্মাণকাজ দৃশ্যমান হবে সহসাই। অবশ্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা না দিলে আগামী ডিসেম্বর মাসেই এই সেতুর নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির নিচে প্রথমে বালির বস্তার ঠেস এবং ওপরে পাটাতন বসিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়। এর পরও মাঝখানে সেতুটি ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে আবারো জোড়াতালির কাজ শুরু করে সওজ। এজন্য ব্যয় হয় ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।

চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দা তানজিমা সুলতানা চকরিয়া নিউজকে জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণের জন্য গেল মার্চে দরপত্র খোলার পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলে। এরপর সেতুগুলো নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। ইতোমধ্যে চারটি সেতুর মাটি পরীক্ষা, স্থান নির্বাচন ও ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। সেতুগুলো নির্মাণে জাইকার অর্থায়নের বিষয়টিও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ইতোপূর্বে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও ছাড় করা হয়।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বড় বড় মেগাপ্রকল্পের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুুহরী সেতুটি ছয় লেনের নির্মিত হবে। এই সেতুটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের ছয় লেনের সড়কটিও। যা কক্সবাজারবাসীর জন্য বড় ধরনের আশীর্বাদ।’

জাফর আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর জন্য অনেক কিছুই করে দিয়েছেন। এখন আমাদের দেওয়ার পালা প্রধানমন্ত্রীকে।’

 

পাঠকের মতামত: