ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় আনন্দ স্কুলের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দের শিক্ষা উপকরণের টাকা লুটপাট!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া থেকে ::

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের আওতায় ৭৪টি আনন্দ স্কুলের দেড় হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণের জন্য বরাদ্দের টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ঝরে পড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ব ব্যাংক বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলেও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম দূর্নীতির কারণে সুফল আসছেনা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় কয়েকজন সচেতন লোক। বিগ কয়েক বছর ধরে পেকুয়া উপজেলায় আনন্দ স্কুলের প্রকল্প বাস্তবায়নের নানান অনিয়ম, দূর্নীতি, সরকারী বরাদ্দ আত্মসাৎ হলেও সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরাবরের মতো এবারের শিক্ষা উপকরণ বরাদ্দ নিয়ে আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেলা টিসি, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকা লুট করলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের তদারকী নাই। সরকারী কর্তৃপক্ষের তদারকীর অভাবে পেকুয়ায় আনন্দ স্কুলের বিভিন্ন বরাদ্দ নিয়ে লুটপাটে মেতে উঠে সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা ৭৪ টি আনন্দ স্কুলের প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণের জন্য দুই শত টাকা করে দেড় হাজার শিক্ষার্থীরা জন্য ৩লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত জুন মাসের ৩০ তারিখের পূর্বেই সেই টাকা শিক্ষকরা চকরিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলনও করে নিয়েছেন। কিন্তু আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) মো: জুনাইদ ৭৪টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের কে পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরী থেকে নিন্ম মানের শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে বাধ্য করেছেন বলে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে। শিক্ষকরা বাধ্য হয়েই পেকুয়া বাজারস্থ ইসলামিয়া লাইব্রেরী থেকে অত্যন্ত নিন্মমানের শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইসলামিয়া লাইব্রেরীর কর্মচারী মো: মহি উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, পেকুয়া উপজেলার বেশিরভাগ আনন্দ স্কুলের শিক্ষা উপকরণ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের দোকান থেকেই ক্রয় করছেন। প্রতিজন শিক্ষাথীদের জন্য তাদের দোকানে ১২৫ টাকা করে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এর বাইরে তিনি আর কিছইু জানেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া বাজারস্থ ইসলামিয়া লাইব্রেরী থেকে সরবরাহকৃত শিক্ষা উপকরণের মান খুবই নিন্ম মানের। খাতা, কলম, স্কেল, ফাইলের মান খুবই নিন্ম মানের। জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার টিসি মো: জুনাইদ পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরীর মালিকের সাথে আঁতাত করে ফাঁয়দা লুটে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিন্ম মানের উপকরণ পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আনন্দ স্কুলের শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, উপজেলার দেড় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য গড়ে দুই শত টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও আনন্দ স্কুলের টিসি সেখান থেকে গড় প্রতি ২০ টাকা করে সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা শিক্ষা অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করেছেন।

তবে এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগযোগ করা হয় আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেরা টিসি মো: জুনাইদের সাথে। তিনি জানান, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে অনিয়ম করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তিনি শিগগিরিই পেকুয়া উপজেলা প্রত্যেক আনন্দ স্কুলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। শিক্ষা উপকরণের টাকা নিয়ে কোন শিক্ষক অনিয়ম করলে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নি¤œ মানের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহকারী পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরীর সাথে আঁতাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। শিক্ষকদের বাধ্য করে ছাত্র প্রতি ২০ টাকা করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।

পেকুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ছালামত উল্লাহ খান জানান, তিনি সরেজিমনে বিভিন্ন আনন্দ স্কুলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: