ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ার পালংখালীর চিংড়ীঘেরের আধিপাত্য নিয়ে দুপক্ষ মুখোমুখি, ৩ বছরে ৩ টি হত্যাকান্ড

ফারুক আহম্মদ, উখিয়া ::

উখিয়ার ক্রাইম জোন হিসাবে আলোচিত পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়াস্থ আব্দুল লতিফ ওয়াকফ ষ্টেট পরিচালিত সাড়ে ৯শ একর চিংড়ী ঘের ও চাষী জমির আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সুবিধাভোগী দুপক্ষের গ্রামবাসী মুখোমুখি অবস্থান করছে। গত ৩ বছরে উক্ত চিংড়ীঘের দখলকে কেন্দ্র করে ৩টি লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও বিরোধীয় সমস্যা সমাধান হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর ষ্টেটে অবস্থান নিয়ে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় এলাকার জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।

সরজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়াকফ ষ্টেটের কর্তৃত্ব নিয়ে সাবেক মতোয়াল্লী জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও বর্তমান মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরী সমর্থকদের বিরোধের জের ধরে ২০১৬ সালে আরফাতুল ইসলাম, ২০১৭ সালে মজিবুর রহমান জাবু ও চলতি বছরের মে মাসে জুহুর আলম বলিসহ ৩ জন খুন হয়েছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষপটে এখানে আবারো খুন খারাবির আশংকা রয়েছে। ওয়াকফ প্রশাসন বাংলাদেশ এর সহকারী প্রশাসক মোঃ মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রঙ্গাপনে জানা যায়, ওয়াকফ অধ্যাদেশের ১৯৬২ এর ৭১ ধারামতে, ওয়াকফ সম্পত্তির বার্ষিক প্রকৃত আয়ের শতকরা ৫ টাকা হারে ধায্যকৃত চাঁদা পরিশোধের বিধান থাকলেও এ পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬২৫ টাকা ষ্টেট পরিশোধ করেননি।

ওয়াকফ ষ্টেটে মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর কাছে উত্তপ্ত পরিস্থিতির ব্যাখ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্টিত নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি মতোয়াল্লী নির্বাচিত হওয়ার ৪ বছরের ব্যবধানে একবারের জন্যও স্টেটে যেতে পারেননি। যে কারনে ৩ বছরের ধার্যকৃত টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, স্টেটের খাজনা আদায় করার জন্য কয়েকবার আঞ্জুমান পাড়া যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা চালিয়ে তার ব্যবহ্নত গাড়ী ভাংচুর করা হয়েছে। এবারো তাকে প্রতিপক্ষরা হত্যার হুমকি প্রদর্শন করছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ওয়াকফ ষ্টেটের নির্বাচিত মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীকে এলাকার কতিপয় দুর্বৃত্ত তার ষ্টেট পরিচালনায় বাধাগ্রস্থ করছে। তারা চায় ষ্টেটের জমি, চিংড়ীঘের লুটপাট করে আতœসাৎ করতে। যে কারনে আঞ্জুমান পাড়া এলাকায় একের পর এক হত্যাকান্ড ও দাঙ্গাহাঙ্গামার ঘটনা ঘটছে।

পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ মঞ্জুর বলেন, প্রতিপক্ষরা জোর করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ওয়াকফ ষ্টেট কার্যালয় ও ষ্টেটের মালিকানাধীন সাড়ে ৯ শ একর জমি জবর দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে সোহেল চৌধুরীকে ষ্টেট ত্যাগ করার হুমকি প্রদর্শন করছে। বিষয়টি উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোলতান আহম্মদ জানান, এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখেতে যারা ষ্টেটের মালিকানা দাবী করছে তারা নিজেরাই বিষয়টি সমাধান করে আসুক। আর যেন এখানে আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদৎ হোসেন জুয়েল এলাকায় শান্তি, শৃঙ্খলা ও শান্ত পরিবেশকে বিশৃঙ্খলা করার জন্য কতিপয় চিহ্নিত লোক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। জনগণের জানমাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, আঞ্জুমান পাড়া ওয়াকফ ষ্টেটের জমি জমা নিয়ে যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নেতাকর্মী ও ওয়াকফ ষ্টেট সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: