ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারের সমুদ্র উপকুল অরক্ষিত: বরাদ্ধ দেয়া ১৩শত কোটি টাকা নিয়ে চলছে লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলার সমুদ্র উপকুলবর্তী বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার, দু টি খাল খনন ও সদর উপজেলার খুরুস্কুল ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাট ও প্রতিরক্ষা মূলক বাঁধ নির্মাণের জন্যে বরাদ্ধ দেয়া ১৩শত কোটি টাকা নিয়ে চলছে লুটপাট। ফলে জেলার সমুদ্র উপকুলবর্তী উপজেলা গুলো এখনো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীরা বরাদ্ধ দেয়া অর্থ থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করে সবাই এখন কোটিপতি। সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অর্ধশত বছরের সরকারী নিয়মনীতি ভঙ্গ করে কক্সবাজারের ৩টি উপজেলাকে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ন্যান্ত করায় এখানে অনিয়ম ও দূর্নীতি মারাত্বক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুর্বে কক্সবাজারের চকরিয়ার আংশিক এলাকা পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বিদ্ধমান ছিল।
বর্তমানে বান্দরবান পাউবোর অধীনে চকরিয়ার আংশিক পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় মাটির বাঁধ ও প্রতিরক্ষা মুলক (সিসিব্লক) দ্বারা বাঁধ নির্মাণের জন্যে প্রায় ২শত কোটি টাকার বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন বাঁেধর ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বন্যা ও সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়ায় ৭ পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে থমকে গেছে জনজীবন। এতে করে উপজেলার উপকুলবর্তী দুটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা সামান্য বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও আমাবস্যার ভরা তিথীতে সাগরে পানি বৃদ্ধি পেলে এখানকার বসবাসরত লোকজন আতংকিত হয়ে উঠে। পানির প্রচন্ড ¯্রােতেও জোয়ারের ধাক্কায় উপজেলার উপকুলবর্তী উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে টেকপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
একইভাবে রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে প্রায় ৫০ ফিট। তাছাড়া রুপালীবাজারপাড়া, সুতাচোরা, সোনালীবাজার, ঠান্ডারপাড়া, করিয়ারদিয়া, কুমবাইশারীসহ ৭ টি পয়েন্টে বিলীন হয়ে গেছে। এসব ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বর্তমানে সাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে ওই ইউনিয়নের নতুনঘোনা, পালাকাটা ও বদিউদ্দিনপাড়াসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী পয়েন্টে বেড়িবাঁধের ২০ ফিট অংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ওই অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বৃষ্টি ও জোয়ারের সময় মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী কুমপাড়া, বাইন্নাঘোনা ও রকুরদিয়াসহ আশপাশের আরও কিছু গ্রামে পানি প্রবেশ করে। উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে টেকপাড়া পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, এ অংশে প্রায় ৭শ ফিট বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ওই অংশ দিয়ে উজানটিয়া খালের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
এতে করে টেকপাড়া, পূর্ব উজানটিয়া, সুন্দরীপাড়া, রুপালীবাজারপাড়া, মালেকপাড়া মিয়াজি পাড়া, নুরীরপাড়া, গোদারপাড়, আতরআলী পাড়া, মিডারপাড়া, ঠান্ডারপাড়া, ঘোষালপাড়া, ঘোরাঘোনা, করিয়ারদিয়া, ফেরাসিঙ্গাপাড়া, পাশ্চিম উজানটিয়াপাড়াসহ এ ইউনিয়নের বিস্তির্র্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। একই ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় পাউবোর বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, করিয়ারদিয়ায় গুদামপাড়া নামক স্থানে বেড়িবাঁধের ৩০ ফুট এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।
উজানটিয়া ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল হাজারী জানায়, স্থানীয় মৎস্য চাষীদের অপরিকল্পিত আরসিস পাইপ বসানোর কারনে এবং পাউবোর কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারনে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজানটিয়ায় সাধারন জনগনের উপর এ দুর্দশা ভর করে।
উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা শুরুর কয়েকমাস আগে থেকে পাউবোর কর্মকর্তাদের বার বার তাগাদা দেয়া স্বত্তেও তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় আজকের এ দুর্দশা। গত ৬ মাস আগে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে বেড়িবাঁধের দুর্দশার কথা জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতের জন্যে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত: