ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, সন্ত্রাসীদের চলছে অস্ত্রের মহড়া

ফারুক আহমদ, উখিয়া:

কক্সবাজারের উখিয়ার সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত পালংখালীতে যুবলীগের আহবায়ক জুহুর আলম (বলি)কে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। ওই ইউনিয়নে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস, জলদস্যূতা, মাদক কারবারী, চিংড়ি ঘের দখল-বেদখল ও অস্ত্রধারী ডাকাতদের জিম্মিদশায় ফারিরবিল, বটতলী, নলবনিয়া, আঞ্জুমানপাড়া গ্রামের মানুষ চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। চিংড়িঘের দখলকারী সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় একের পর এক লাশ পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে প্রতিনিয়ত অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদেরকে গ্রেপ্তারের গরজ মনে করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের নিরবতায় এসব সন্ত্রাসীরা দিন দিন মাথাচাড়া উঠছে। ফলে পালংখালীতে খুন-খারাবি আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশের খাতায় মোষ্টওয়ান্টেড কোন দাগী সন্ত্রাসী এবং ডাকাতদের আস্তানায় পুলিশ ও র‌্যাবের সাড়াশি অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় অদ্যবধি উল্লেখযোগ্য কোন অপরাধীকে আটক করতে পারেনি।

গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পালংখালীর মৌলভী আবদুল লতিফ ওয়াকফ এস্টেটের মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর নিকট থেকে ফাঁসিয়াখালী নামক প্রজেক্ট মাছ চাষের জন্য ইজারা নেয় স্থানীয় মৎস্যচাষী জুহুর আলম। স্থানীয় মোকতার আহমদ প্রকাশ কালাচাঁন গং গত ২৬ মে চিংড়ি প্রজেক্টে মাছ চুরি করতে গেলে ঘের মালিকের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনার সুত্র ধরে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী একটি মহল বড় ধরনের ঘটনার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। তারই জের ধরে ৩১ মে দিবাগত রাতে জুহুর আলমের চিংড়ি ঘেরে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী মাছ ডাকাতি করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় ১৫/২০ অস্ত্রধারী ডাকাতদল চিংড়ি ঘেরের মালিক নিরীহ জুহুর আলম ও তার ভাই জাহেদ আলমকে ধারালো কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপায়। সন্ত্রাসীরা জুহুর আলমের একটি হাত কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং খন্ড-বিখন্ড করে হত্যা নিশ্চিত করে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যায়।

এদিকে গতকাল ৬ জুন সকালে পালংখালী বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী শাবানা আকতার (১৬) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নরপশু সন্ত্রাসীরা আমার বাবা জুহুর আলমকে হামলা চালিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে এবং হাতের কব্জি শরীর থেকে দ্বি-খন্ডিত করে। কালাচান বাহিনীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার নিরহ বাবাকে বুকে-পিঠে ধারালো অস্ত্র (গ্যাজা) খুচিয়ে মেরে শরীরে গুরুত্বর জখম করে।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৩৬) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমার স্বামী জুহুর আলমকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। বর্তমানে তারা আমার ছেলে-মেয়েকেও গুম ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বয়োবৃদ্ধ ছলেমা খাতুন (৭০) কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমার ছেলে কি অপরাধ করেছিল। সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার পর হাতের কজ্বি কেটে নিয়ে উল্লাস করেছে। এখন আমার, ছেলের স্ত্রীর ও ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত কি হবে ? আমার ছেলে জুহুর আলম হত্যাকান্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক ফাঁসি দাবী করছি।

সংবাদ সম্মেলনে হামলার শিকার নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী জাহেদ আলম বলেন, শফিক্যা ডাকাত, কালা চান ডাকাত, কাউছার, বশির আহমদ, নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইসমাইল, সোহেল, রমজান আলী, রিদুয়ান, কফিল, রশিদ প্রকাশ আব্দুইয়াসহ ১৭/১৮ জন সন্ত্রাসী বাহিনী অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নৌকাযোগে চিংড়ি ঘেরে গিয়ে আমার ভাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে হাতে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের জানান, জুহুর আলম হত্যাকান্ডের জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত জড়িত থাকার অভিযোগে ২জনকে আটক করা হয়।

#

পাঠকের মতামত: