ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

লামা-আলীকদমে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না তামাক চাষীরা মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে লভ্যাংশ

লামা প্রতিনিধি ::

পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে উৎপাদিত তামাক বিক্রি করার পর শেষ হাসি হাসতে পারে নি লামা ও আলীকদমের শত শত কৃষক। তামাক কোম্পানি গুলোর স্থানীয় গুটি কয়েক কর্মকর্তা, কর্মচারীর অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারনে তাদের মুখের হাসি ও পরিবারের স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে এক শ্রেনীর মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানিগুলোর নানা ছলচাতুরীর কারনে উৎপাদিত তামাকের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিক্রয় কেন্দ্র গুলোতে প্রায়ই ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো তামাক বিক্রি বন্ধ করে দেয়ায় চাষীদের ঘরে থাকা তামাক বাধ্য হয়ে কম দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, গত তিন যুগের বেশি সময় ধরে লামা ও পার্শ্ববর্তী আলীকদম উপজেলার ফসলি জমিতে তিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের লোভনীয় প্রস্তাবে কৃষকেরা ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন না করে তামাক চাষ করে থাকে। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন কোম্পানীর আওতায় উপজেলা দুটি এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহের প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। সাধারনত চাষীরা বছরের অক্টোবর–নভেম্বর থেকে তামাক চাষ শুরু করে। প্রায় ৭ মাস পরিবার পরিজন নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়জাতকরণ শেষে এপ্রিল–মে মাসে বিক্রি করে। তামাক কোম্পানী গুলো তামাক ক্রয়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেন।

তামাক চাষী স্বার্থ রক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান জানিয়েছেন, তামাক কোম্পানী গুলো চলতি মৌসুমে নানান ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে তামাক চাষীদের ঠকিয়েছে। তাদের অনিয়ম, প্রতারনা ও স্বজনপ্রীতির কারনে চাষীদের লভাংশ গেছে মধ্য স্বত্ত্বভোগীদের পকেটে। প্রতি বেল তামাকে ব্যবহারিত চট বাবদ বিগত বছর গুলোতে সর্বোচ্চ ২ কেজি বাদ দেয়া হলেও চলতি মৌসুমে ৪ কেজি কোথাও কোথাও আরো বেশিও বাদ দেয়া হয়েছে। প্রতি কেজি ১ নং তামাক চলতি মৌসুমে ১৫৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে একজন কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া কোম্পানীর লোকজন নিজেদের ইচ্ছামত গ্রেডিং করেছেন। একই ধরনের তামাক কোন পরিচিত কৃষক থেকে স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে ক্রয় করেছেন, আবার অন্য কৃষকের ক্ষেত্রে ন্নিমানের বলে বাদ দিয়েছেন। কৃষক তামাক বিক্রয় কেন্দ্রে ১০/১২ বেল তামাক বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসলে ২/৪ বেল একটু ভালো মানের গ্রেডিং দিয়ে অন্যগুলো নিম্নমানের গ্রেডিং প্রদান করেছেন। গড়ে যা প্রায় ৫/৬ নং গ্রেড পড়েছে। এর ফলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়েছেন।

মোঃ শাহজাহান আরো জানান, প্রতি একর তামাক চাষে ৮শ’ থেকে ১ হাজার কেজি তামাক উৎপাদন হয়ে থাকে। এসকল তামাক প্রক্রিয়া শেষে বিভিন্ন কারনে ২/৩ বেল তামাক সাধারণত একটু কালো রংয়ের হয়ে থাকে। এসকল তামাক ক্রয় অযোগ্য বলে কোম্পানী গুলো চাষীদের থেকে ক্রয় করেনা। যার কারনে বাধ্য হয়ে চাষীরা এক শ্রেনীর মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের নিকট নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ওই তামাকই কোম্পানীর কিছু কিছু কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দনীয় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের নিকট থেকে মান সম্মতদামে ক্রয় করে থাকেন। কালো রংয়ের তামাক বিক্রি করতে না পারার কারনে চাষীদের লভ্যাংশ মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে চলে যাচ্ছে আর চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন । এদিকে, তামাক কোম্পানী গুলোর এসকল অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর গজালিয়া এবং লামা লাইনঝিরি এলাকায় তামাক বিক্রয় কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিলো। যা পরবর্তীতে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমাধান করেন।

তামাক ক্রয় কেন্দ্র গুলো সরজমিন পরিদর্শন কালে ,কৃষক আব্দুর শুক্কুর, হাসিনুর ও কেমাচিং মার্মাসহ আরো অনেকে তামাক কোম্পানী গুলোর এসকল অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। এসময় তারা বলেন, তামাক কোম্পানী গুলো পাতার রং এক দিকে যেমন একট কালো হলে ক্রয় করে নাই, অন্য দিকে ১২ বেলের বেশি তামাক ক্রয় করে নাই। এর ফলে কৃষকেরা বড় ধরনের লোকসানের সম্মু িন হয়েছেন। কৃষকেরা জানিয়েছেন, কোম্পানী গুলোর ছলচাতুরীর কারনে লোকসানের সম্মুখিন হওয়ায় অনেক কৃষক চলতি মৌসুমে পরিবার–পরিজনের স্বপ্ন পূরণতো দুরের কথা তাদের দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবেনা। ইতিমধ্যে কোম্পানী গুলো তামাক ক্রয় বন্ধ করে দেয়ায় অনেক কৃষকই তাদের অবিক্রিত বাড়তি তামাক নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন।এসকল বিষয়ে ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানীর ডিপো ম্যানেজার সানাউল্লাহ সিকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন ধরনের মধ্য স্বত্ত্বভোগীদের সুযোগ দেয়া হয় নাই।

প্রকৃত কৃষক থেকেই তামাক ক্রয় করা হয়েছে। তবে যে সকল তামাকের রং একেবারে কালো এবং ঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত হয় নাই, সেকল তামাক ক্রয় করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর বক্তব্য জানার জন্য কর্মকর্তাদের মোবাইলে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষকদেরকে সার, বীজসহ নানান ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদেরকে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে আসছি। তারপরও তারা তামাক কোম্পানী গুলোর প্রলোভনে অধিক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছে। সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকায় তামাক বিক্রয়কালিন সময়ে কৃষি বিভাগের প থেকে কোন ধরনের মনিটরিং করা হয়না বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: