ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মীরসরাইয়ের পাহাড়ে চা বাগানের নতুন সম্ভাবনা

মীরসরাই প্রতিনিধি ::

মীরসরাইয়ের পাহাড়ে চা বাগান হতে পারে নতুন সম্ভাবনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় চা উৎপাদন করে পুরো দেশের চায়ের ঘাটতি পূরণ সম্ভব। মাটি ও প্রাকৃতিক উপযোগিতায় এখানকার বনভূমির ১০ হাজার একর জমি উৎকৃষ্ট মানের চা চাষের উপযোগী। এখন প্রয়োজন চা বোর্ডের উদ্যোগ।

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় চা বোর্ড বলছে, আগ্রহীরা উদ্যোগ নিলে চা বোর্ড সকল প্রকার সাহায্য করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে উল্টো আমদানি করতে হচ্ছে। চা বাগানের কথা উঠলে একসময় শুধু সিলেটের কথা আসত। কিন্তু এখন চায়ের সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্পৃক্ততা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সিলেটের পর রাঙামাটি, বান্দরবান এলাকায় চা উৎপাদনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া মীরসরাই উপজেলার পার্শ্ববর্র্তী রামগড় ও ফটিকছড়িতে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র উদ্যোগের অভাবে চাষ হচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মীরসরাই উপজেলার পার্শ্ববর্তী রামগড় চা বাগান স্থাপিত হয় ১৯১৫ সালে। পরে এর আশপাশে গড়ে ওঠে নেপচুন, দাঁতমারা, আধারমানিকসহ অনেক চা বাগান। রামগড় চা বাগানের আয়তন ১৩৭৬ একর, দাঁতমারার আয়তন ৬০০ একর, আধারমানিক চা বাগানের আয়তন ১৫০ একর। চট্টগ্রাম চা বোর্ডের নীতিমালার অধীনে সবাই এসব বাগান পরিচালনা করছেন। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেল রুট থেকে সারি সারি সুউচ্চ পাহাড় দেখে সকলেই মুগ্ধ হন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বনভূমি বিলীন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এখানে আংশিক সবুজের দেখা গেলে। শুস্ক মৌসুমে ন্যাড়া পাহাড়গুলো খাঁ খাঁ করে। সংশ্লিষ্ট বলছেন, চা বাগান গড়ে উঠলে এই জোনের বনভূমি ফিরে পাবে নতুন প্রাণ।

রামগড় চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার অতীশ সেনগুপ্ত বলেন, ১৩৭৬ একরের এই বাগানে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ৬ লক্ষ কেজি চা। এখানে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করেন। তিনি বলেন, চা বাগান সৃজনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য ও একাগ্রতা। গাছ লাগানোর ৪–৬ বছর আয়ের কথা চিন্তা না করে শুধু বিনিয়োগ করে যেতে হয়। চারা থেকে গাছ চা ফলনে উপযোগী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও এক প্রকার বিনিয়োগ। চা বাগান বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানান, মীরসরাই উপজেলার করেরহাট থেকে ওয়াহেদপুর পর্যন্ত ৩০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে কিছু অংশ রিজার্ভ ফরেস্ট রেখে বাকি অংশকে চা বাগান সৃজনে প্রাকৃতিকভাবেই উপযোগী।

এই বিষয়ে রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক অতীশ সেনগুপ্ত বলেন, অধিক উঁচু–নিচু পাহাড় চা চাষের জন্য ভালো। শুধুমাত্র চা সংগ্রহের ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক যথেষ্ট। আবার এই জোনে চাইলে ঢালু এলাকা বর্জনও সম্ভব। কারণ করেরহাট থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ পাহাড় ফাঁকা পড়ে আছে।

মীরসরাই উপজেলা অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাব্যতা বিষয়ে সিলেট চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞানী শেফালী ব্যানার্জি বলেন, মীরসরাই অঞ্চল চা চাষের জন্য যথেষ্ঠ উপযোগী। এ অঞ্চলে চা চাষ বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম চা বোর্ডকে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় চা বোর্ডের উপ–পরিচালক (পরিকল্পনা) মনির আহমেদ বলেন, মীরসরাই–সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি অঞ্চল চা চাষের উপযোগী। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের বিনিয়োগকারী এগিয়ে এলে আমরা সহযোগিতা করব।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল কবির বলেন, এই অঞ্চলে চা চাষ হলে অবশ্যই দেশের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে। চা বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমরা সকল পর্যায়ে সহযোগিতা প্রদান করব।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের ১৬২টি বাগানের ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ২০১৫ সালে ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এখন প্রতি বছর আনুমানিক ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি হয়। কাজাখিস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, পোল্যান্ড, রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, কুয়েত, ওমান, সুদান, সুইজারল্যান্ডসহ অনেকগুলো দেশে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের চা।

গত দশ বছরে পৃথিবীতে চায়ের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। এই চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর প্রায় ৫২ ভাগ চায়ের চাহিদা পূরণ করছে। চা উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে না পারলে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশের চা বিদেশে রপ্তানি করা খুব কঠিন হবে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রতিটি ক্ষুদ্রায়তনের ১ হাজার একর চা বাগানে বছরে আয় হতে পারে কোটি টাকা। বাংলাদেশে চা আবাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা দুটি নতুন ক্লোন বিটি–১৯ ও বিটি–২০ চা শিল্পের জন্য অবমুক্ত করা হবে। মীরসরাই উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর পাহাড়ি এলাকার মধ্যে করেরহাট, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মীরসরাই, খৈয়াছরা, ওয়াহেদপুর এলাকার পাহাড়ে চা বাগান করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।

পাঠকের মতামত: