ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

টার্গেট রমজানের ঈদ: মানহীন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ী

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ::

ভেজাল ও মানহীন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের অসাধু ব্যবসায়ীরা।  এসব ব্যবসায়ীরা অধিক পণ্য লাভের  আশায়  ভেজাল, নকল, মানহীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাংলা সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, নুডলস, ঘি, হলুদ, মরিচ, মসলা, বেসন, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, লবণ, পাউরুটি, কেক ইত্যাদির ব্যাপক উৎপাদনের পাশাপাশি সাবান, পারফিউম, কসমেটিকস, খনিজ পানি, পাকা কলা, ফলমূল, মাছ, শুঁটকিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নানা উপকরণ ও রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। রামজান ও ঈদকে সামনে রেখে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে বেশ কিছু কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও এর বাইরে শত শত কারখানা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল, ফরমালিন-কার্বাইড, সূতা রাঙানোর বিষাক্ত রং, ভেজাল পাম তেল, সেন্ট, পচা ডিম ইত্যাদি মেশানো হচ্ছে খাদ্যপণ্যে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রমজান ও ঈদে সেমাইর পাশাপাশি হরেকরকম ইফতার ও নাশতা তৈরির জন্য ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরব্যাপী বিয়ে, মেজবানসহ নানা আয়োজনেও পণ্যটির চাহিদা থাকে। এ চাহিদাকে পুঁজি করে নগরীর বায়েজিদের বিসিক, রাজাখালী, হামজারবাগ, মাদারবাড়ি, চকবাজারসহ বাড়বকুণ্ড, দোহাজারী, পটিয়া, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, রাউজান গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ঘি কারখানা। এ ছাড়া অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে বেশকিছু ‘ভ্রাম্যমাণ’ ঘি কারখানা।
ঘি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাঘাবাড়ি ঘিয়ের সুনামকে পুঁজি করে ২ ডজনেরও বেশি নকল ঘি বাজারে রয়েছে। এ ছাড়া আসল ব্রান্ডগুলোর কাছাকাছি নামে শতাধিক ঘি এখন বাজারে পাওয়া যাবে। লেবেল, কৌটা, সুগন্ধ দেখে সাধারণ মানুষের আসল-নকল পার্থক্য বোঝা কঠিন। অন্যদিকে খোলা ঘিয়ের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য নকল ঘি উৎপাদকদের।
জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কিছু নকল ও নিম্নমানের বাংলা ও লাচ্ছা সেমাই, নুডলস, মসলার গুঁড়ো, লবণ ও ঘি উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে। রাজাখালী, বাকলিয়া, চরচাক্তাই, ডিসি রোড, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, খলিফাপট্টি, বউবাজার এলাকায় রয়েছে কিছু সেমাই-মসলা ও ঘি তৈরির ভ্রাম্যমাণ কারখানা। পশ্চিমমাদারবাড়ি ও বহদ্দারহাট এলাকায় কিছু লাচ্ছা সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে। ভেজাল কেক ও পাউরুটি কারখানা ছড়িয়ে আছে নগরজুড়ে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কিছু কিছু মৌসুমী কারখানা কয়েকমাস পরপরই স্থান পরিবর্তন করে প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার উদ্দেশ্যে। অনেক কারখানায় দিনের বেলা বাইর থেকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে শ্রমিকেরা পণ্য উৎপাদন করে। কোনো কোনো কারখানা দিনের বেলা বন্ধ থাকে, শুধু রাতের বেলা বেশি শ্রমিক লাগিয়ে কাজ চালানো হয়।
এসব কারখানার চকচকে মোড়কজাত পণ্য দেখে সাধারণ মানুষের বোঝার উপায় থাকে না আসল না নকল। বেশিরভাগ মোড়কে বিএসটিআই’র লোগো (মনোগ্রাম) ও পণ্যের গুণগানসমৃদ্ধ স্লোগান ছাপিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে ক্রেতাদের।
রাজাখালী এলাকায় দেখা গেছে, এখানে বাংলা সেমাই উৎপাদনের ধুম পড়েছে। বাইরে তালা ঝুলিয়ে আলো-আঁধারি পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে সেমাই। শ্রমিকদের ঘাম অবাধে মিশে যাচ্ছে সেমাইর খামিতে (কাঁচামাল)। ডায়াসের (যন্ত্র) ঢালার সময় যেসব খামি মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে সেসব পুনরায় ডায়াসে দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি ক ছোট ছোট বাঁশের কঞ্চিতে কাঁচা সেমাই সাজিয়ে শুকানো হচ্ছে বদ্ধ ঘরে মাচা বানিয়ে। কিছু কারখানায় সেমাই লাল করা হচ্ছে বস্কুট তৈরির চুল্লিতে।
এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি নাজের হোসাইন জানান, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। সেমাই, ঘি, মসলাসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যে ভেজাল, নকল, মানহীন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে ফলমূল-মাছ-সবজি সংরক্ষণ ও পাকানো, ওজন ও মূল্যে কারচুপি, পচা-বাসি খাবার বিক্রি, মহিষের মাংসকে গরুর মাংস বলে চালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। একই সাথে তাদের শাস্তির আওত্য্যায় আনার কথা বলেন।

 

পাঠকের মতামত: