ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় লবনের হঠাৎ দরপতন, অর্থনীতিতে স্থবিরতা

soltনাজিম উদ্দিন, পেকুয়া ::

পেকুয়ায় লবনের মূল্যের হঠাৎ পতন হয়েছে। পরিশোধন লবনের দাম সারা দেশে অপরিবর্তিত থাকলেও হঠাৎ মাঠে উৎপাদিত কাঁচা লবনের দরের পতন হয়েছে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতিতে ফের স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত ১৫দিন ধরে দরপতনের আধিক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। চলতি উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কাঁচা লবনের আকাশ ছোয়া দাম হয়। প্রতিমণ লবন মাঠে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪শত টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি লবন ১০টাকা মূল্যে বিক্রি হয়েছে। আগের ওই মূল্য হঠাৎ হ্রাস পেয়েছে। ১৫দিনের ব্যবধানে পেকুয়ায় লবনের মূল্যের ব্যাপক ধ্বস নেমেছে। ৪শত টাকার লবন এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১শত ৫০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১শত ৭০টাকায়। হঠাৎ মূল্য পতন হওয়ায় পেকুয়াসহ উপকুলের স্থানীয় অর্থনীতিতে এর নীতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে হঠাৎ লবনের দাম নি¤েœর দিকে ধাবিত হওয়ায় উপকুলের অর্থনীতির বিশাল অংশ ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছে। লবন পেকুয়াসহ উপকুলের সাদা স্বর্ণ। এখানকার অর্থনীতি লবন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। হাজার হাজার মানুষ লবন উৎপাদন করে জীবিকা অন্বেষনে ব্যস্ত। লবন উপকুলের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ ভোমরা। বিশাল অঞ্চলে দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনীতির সূচক প্রসারের জন্য লবন উপকুলের অন্যতম অর্থকরী সম্পদ। লবনের হঠাৎ দুরাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় উপকুলের মানুষের জীবিকা ও দৈনন্দিন আয়ে ব্যাপকভাবে ভাটা পড়েছে। জানাগেছে, দেশে এখনো বিদেশ থেকে লবন আমদানি স্থগিত রয়েছে। এরপরেও হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় কারন না জেনে হতাশ হয়েছেন উৎপাদনকারী লবন চাষীরা। গতকাল রবিবার দুপুরে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নে পরিদর্শন করতে গিয়ে লবন চাষীদের সাথে কথা হয়েছে। এসময় চাষীরা জানিয়েছেন বর্তমান কাঁচা লবনের দাম দেওয়া হচ্ছে ১শত ৫০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১শত ৭০টাকা। এরমধ্যে সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতি মণে ২০ থেকে ২৫টাকা খরচ কর্তন হচ্ছে চাষীদের। চাষীরা জানিয়েছেন, লবনের দাম পড়ে যাওয়ায় তারা অনেকে লবন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে দেশে পরিশোধনযোগ্য লবনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর মোড়কজাতকৃত লবন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫টাকায়। বাজারজাতকৃত লবনের দাম অপরিবর্তিত। কিন্তু কাচা লবন হঠাৎ দরপতনে নি¤েœর দিকে চলে যাওয়ায় বাজার স্থিতিশীলতায় ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। জানাগেছে, বর্তমান সময়ে তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। তবে চাষীরা এখনো কাংখিত লবন মাঠ থেকে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়নি। এরমধ্যে উপকুলের অনেক জায়গায় এখনো চাষীরা মাঠে লবন দেখেননি। বিপুল অংশে মাঠ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে লবন উৎপাদনের পিক মৌসুম। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সুত্রে জানাগেছে, এপর্যন্ত গড়ে ১শত মণ পলিথিন জাত কাঁচা লবন প্রতিকানি জমিতে উৎপাদন হয়েছে। অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি লবনে কক্সবাজার জেলা, চট্টগ্রাম জেলার আংশিকসহ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০হাজার একর জমিতে লবন উৎপাদন হচ্ছে। এখাতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। লবন দেশজ উৎপাদন ও জিডিপিতে অর্থনীতির উচ্চতর সুচক তৈরিতে কাজ করছে। সুত্র জানিয়েছে, বছরে দেশে প্রায় ১৮লাখ মেট্রিক টন লবনের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেঠানোর জন্য দেশেই উৎপাদিত লবনই সক্ষম। এরমধ্যে বিদেশ থেকে লবন আমদানি হলে নিশ্চিত মার খাবে দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে প্রচুর দেশীয় মুদ্রা চলে যাবে বিদেশে। লবন আমদানি স্থগিত থাকলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এব্যাপারে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, লবন এখন সম্ভবনাময় একটি কৃষি খাত। যা অর্থনীতির নতুন ভাষায় লবনকে সাদা সোনা আখ্যায়িত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: