ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার ও মহেশখালী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা

dddddএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার,১৪ ফেব্রুয়ারী ॥

কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া জমি রেজিষ্ট্রি হয় না বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাগজপত্রে ত্রুটির কথা বলে জমি ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে দাবি করা হয় মোটা অংকের ঘুষ। না দিলে জমি রেজিষ্ট্রি হয় না। অফিসের কেরানী থেকে শুরু করে সাব রেজিষ্ট্রার সবাইকে ঘুষ দিতে সুকৌশলে বাধ্য করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ‘ফি’ এর বাইরে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখককে দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। সবমিলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে কক্সবাজার সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস।

ভুক্তভোগীরা জানায়, কক্সবাজার সদরের বর্তমান সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেক এই অফিসে গত ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর যোগদান করেই অবৈধ উপায়ে দু’হাতে অর্থ উপার্জনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কক্সবাজার সদর ছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে মহেশখালী সাব রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। প্রতি মঙ্গলবার মহেশখালী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেখানেও ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, এই দুই উপজেলায় কর্মরত সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেক প্রতিমাসে ২০-৩০ লাখ টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেক কোন কোন দিন ৫০ হাজার আবার কখনও লাখ টাকাও অবৈধ পথে উপার্জন করেন। এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করা হয়। সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেক কক্সবাজার সদর সাব রেজিষ্ট্রারের দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে ঢাকা গুলশান সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি ছিলেন নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের সাব-রেজিষ্ট্রার । জালিয়াতির মাধ্যমে পূর্বাচলে কুয়েত প্রবাসীর নামে বরাদ্দ দেওয়া প্লট আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক রূপগঞ্জ ও গুলমান সাব রেজিষ্ট্রার বর্তমান কক্সবাজার সদর সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেকসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২০১৫ সালের ১৫ জুন রাজধানীর মতিঝিল মডেল থানায় দুদক-এর উপ সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে এ মামলা ( মতিঝিল থানার মামলা নং-০৯/১৫ইং, তাং-১৫.০৬.২০১৫) করেন। এ মামলায় আরো আসামি করা হয় রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম আহসান ইকবাল, একই প্রকল্পের সাবেক সহকারী পরিচালক (বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী সচিব) মোঃ আবুল বশর, জালিয়াত চক্রের সদস্য মোঃ রুহুল আমিন খাদেম, রাজউকের নিম্নমান সহকারী রাজিয়া বেগম, জালিয়াত চক্রের সদস্য মোঃ আক্তার হোসেন, এম এ কে খন্দকার আজাদ এবং মোঃ আশরাফকে।

আবদুল মালেক কক্সবাজার সদর সাব রেজিষ্টার অফিসে যোগদানের পর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মহেশখালী উপজেলার সাব রেজিষ্ট্রারের পদটিও লুফে নেন। এই দুই উপজেলায়ও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। জমি রেজিষ্ট্রির নামে কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকার পরও দলিল প্রতি নির্ধারিত হারে সাব রেজিষ্ট্রার আবদুল মালেককে ঘুষ দিতে হয়।

বর্তমান আইনমন্ত্রী অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে সাব রেজিষ্টারদের পোস্টিং দিলেও মাঝপথে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা মোটা অংকের অর্থ সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনই তথ্য কক্সবাজার সদর ও মহেশখালীর সাব রেজিষ্ট্রার আবদুল মালেক তার ঘনিষ্ঠজনদের বলে বেড়ান এবং তার পোষ্টিংও নাকি এভাবে হয়েছে। আর এ কারণে আবদুল মালেক কাউকে পরোয়া করেন না।

ঘুষ বাণিজ্যের কারণে স্থানীয় প্রশাসনও বিব্রত। এ ব্যাপারে গত রাতে অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেকের মোবাইলে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দায়িত্ব পালনে রয়েছে ব্যাপক গাফিলতি। সরকারি অফিস সময় পালন না করার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া দলিলপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দেয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। দলিল লেখকের সাথে তাচ্ছিল্যের সাথে ব্যবহার করায় তারাও ক্ষুব্ধ। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় কক্সবাজার সদর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস পরিদর্শনে যান মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) জেলা ও দায়রা জজ্ খান মোহাম্মদ আবদুল মন্নান। সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার জেলা রেজিষ্ট্রার এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এবং কক্সবাজার সদর সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুল মালেক ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারীবৃন্দ।

এসময়, কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতি পক্ষ থেকে জমি রেজিষ্ট্রীতে মৌজা মুল্য বৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয় সহ সংশ্লিষ্ট অনিয়ম-হয়রানির অভিযোগে মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) জেলা ও দায়রা জজ্ খান মোহাম্মদ আবদুল মন্নান এর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জমি রেজিষ্ট্রেশনে গতি ফিরিয়ে আনতে মৌজা মুল্য কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-হয়রানির অভিযোগ সুরাহার দাবি জানান। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। বরং অনিয়ম দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিদিন অফিস সময়ের পরে উৎকোচের টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা করলে সাব রেজিষ্ট্রার আবদুল মালেককে হাতেনাতে ঘুষের টাকাসহ আটক করা সম্ভব।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, পর্যটন জেলা কক্সবাজারে বর্তমান সরকারের অসংখ্য সফলতা ঢাকা পড়ছে সাব রেজিষ্ট্রার আবদুল মালেকের মতো দুর্নীতিবাজদের কারণে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন গোপনে অভিযান পরিচালনা করলে দুর্নীতিবাজ আবদুল মালেকের বেপরোয়া দুর্নীতি আর অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসবে। তার অনৈতিক উৎকোচ গ্রহণের কারণে রেজিষ্ট্রেশন বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, আবুল মালেক নাকি আইজিআর অফিস এবং মন্ত্রণালয় ম্যানেজ করে এইসব বেপরোয়া কর্মকান্ড চালান। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা আইন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও আইজিআর পরিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: