ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

শেষ হয়নি মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, খোঁজ মেলেনি আসামি মুছার

নিউজ ডেস্ক;:
আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের পর দেড় বছর পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। দিতে পারেনি চার্জশিটও। ফলে জানা যায়নি প্রকৃত ঘটনা। আর এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি মুছাকে এখনো খুঁজে পায়নি পুলিশ।

অন্যদিকে মিতু হত্যাকাণ্ডের পর একপর্যায়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের দূরত্ব বেড়েছিল। সেই দূরত্ব এখনো রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। বাবুলের শাশুড়ি মাঝেমধ্যে দেখতে যাচ্ছেন বাবুলের ছেলে ও মেয়েকে। তবে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই। নাতি-নাতনিকে দেখতে গেলেও দেখা করতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁদের ফোন ধরতেও দেওয়া হয় না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মিতুর মা নাতি-নাতনিকে দেখতে গিয়েছিলেন বাবুলের বাসায়। কিন্তু নাতি-নাতনিকে না দেখেই তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত এগোচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা যে সহযোগিতা চাইছেন, তা করা হচ্ছে। আমি চাই, প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি তো কয়েক দিন আগেও আমার বাসায় এসেছিলেন। তিনি তাঁর নাতি-নাতনির খোঁজখবর নিচ্ছেন।’

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর পুলিশ এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করে নবী, ভোলা, মনির, ওয়াসিম, কালু, রাশেদ, শাহজাহান ও আনোয়ারকে। পরে নবী ও রাশেদ ক্রসফায়ারে নিহত হয়। গ্রেপ্তার করা আনোয়ার ও ওয়াসিম জবানবন্দিতে জানায়, মাহমুদা হত্যার পুরো বিষয়টির সমন্বয় করে কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। সেই মুছা কোথায়, তা আজও জানা যায়নি। তার স্ত্রীর দাবি, হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিন পর বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে মুছাকে। কিন্তু পুলিশ বরাবর অস্বীকার করে আসছে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি। গতকাল সোমবারও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মুছাকে তাঁরা গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলাটির এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মুছাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।’

২০১৬ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে মাহমুদা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলিসহ ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৮ জুলাই বাকলিয়া থানার পুলিশ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু অস্ত্রের উৎস এবং কার নির্দেশে ভোলা সেই অস্ত্র মুছাকে দিয়েছিল, তা তদন্তে স্পষ্ট হয়নি।

হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ২০১৬ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ায়। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না তদন্তকারীদের কাছ থেকে।

সূত্র জানায়, মুছা এবং তার দুই সহযোগী নবী ও কালু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর মধ্যে নবী ও কালু ছুরিকাঘাত করে বলে জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানিয়েছে। পরে বাকলিয়া এলাকা থেকে ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা পিস্তলটি মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় বলে পুলিশের ভাষ্য। ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়। মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ভোলাকেও। ভোলা ও মনিরকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আদালতে এই অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হয়।

পাঠকের মতামত: