ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় শ্বশুরালয়ে হাসেম হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য, থানায় মামলা নিতে গড়িমসি

ফারুক আহমদ, উখিয়া ॥

ভালবেসে বিয়ে করে নববিবাহিত স্ত্রী আকলিমা বেগমকে ঘরে তুলার আগেই পরকীয়া নামক বিষাক্ত নেশার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হল নুরুল হাসেম নাকম এক টকবকে যুবক। পরকীয়া প্রেম ও অবাধ্য চলাফেরা বাধা দিতে গিয়ে অমানষিক নির্যাতন ও মারধরে তার মৃত্য হয় বলে দাবী নিহত পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে উখিয়ার বালুখালী শ্বশুর বাড়ীতে গত সোমবার রাতে। এ নির্মম ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এদিকে বালুখালীর বাসিন্দরা জানান, ঘটনার পর পরই শ্বশুর, শাশুড়ী ও স্ত্রী সহ অন্যারা বাড়ি তালা মেরে পালিয়ে গেছে।

এব্যাপারে নিহতের ভাই নুরুল আমিন ভুট্টু বাদী হয়ে স্ত্রী অকলিমা বেগম,শ্বশুর শামশুল আলম সহ ৬ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় এজহার দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ উক্ত মামলা রুজু করতে গড়িমসি করছে বলে পরিবারের পক্ষে অভিযোগ উঠেছে।

রত্মা পালং ই্উনিয়নের ঝাউতলা গ্রামের বজলুল রহমানের পুত্র নিহত নুরুল হাসেমের ময়না তদন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সম্পন্ন করে গত মঙ্গলবার বিকেলে খোন্দকার পাড়া কবর স্থানে দাফন করা হয়।নিহতের পরিবারে চলছে পুত্র শোকের মাতম।

জানা যায়, উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীস্থ পান বাজার গ্রামের প্রবাসী শামশুল আলমের মেয়ে আকলিমা বেগমের সাথে নুরুল হাশেমের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছর দু’জনেই হলফনামা মূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আনুষ্ঠানিকতা না হওয়ায় ঘরে তুলে আনেনি এখনো নববধুকে। তবে স্বামী হিসাবে হাশেম প্রতিনিয়ত শ্বশুর বাড়ীতে আসা-যাওয়া ছিল। কোটবাজার মিলিখা মার্কেট ও বালুখালীতে দোকান ছিল তার।

সরজমিন পরিদর্শন ও খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও সংস্থা এনজিও ফোরাম কর্মরত আকলিমা। চাকুরীস্থলে সহকর্মীর সাথে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ও বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একাধিকবার মনোমালন্য ও ঝগড়ার ঘটনাও ঘটে। স্বামী আবুল হাশেম একাধিকবার চেষ্টা করেও স্ত্রীকে পরকীয়া সম্পর্ক থেকে ফেরাতে বারবার ব্যর্থ হয়।

পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত ৮টার দিকে অজ্ঞাত এক মোবাইল ফোন থেকে খবর দেওয়া হয় আবুল হাশেম বিষ পান করে উখিয়া হাসপাতালে রয়েছে। আত্বীয়স্বজনরা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় মুমর্ষ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে মারা যায় তিনি।

নিহতের ছোট ভাই ইমরান সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের মাথায় মারাত্বক জখমের চিহৃ রয়েছে। এছাড়াও সারা শরীরের আঘাতও দেখা গেছে। নাকে জমাট বাঁধা রক্ত ছিল। কুসুম ফুলে গেছে। তার দাবী পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেওয়ার অপরাধে ক্ষুদ্ধ হয়ে স্ত্রী সহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পরিকল্পিত ভাবে অমানষিক নির্যাতন চালিয়ে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। শুধু তাই নয় মুমর্ষ অবস্থায় একটি সিএনজি যোগে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। বালুখালী এলাকার মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শ্বশুর শামশুল আলম ঘটনাটি তাকে জানালে তিনি মুুমুর্ষ নুরুল হাসেমকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওযার জন্য পরামর্শ প্রদান করি এবং আমার সামনেই তাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহতের বড় ভাই নুরুর আমিন ভুট্টু জানান চাচা শ্বশুর ফরিদুল আলমের বাড়িতে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন চালায়। পরে ইনানীর মোহাম্মদ শফিরবিল এলাকার ড্রাইভার দিয়ে সিএনজি যোগে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। বয়োবৃদ্ধ পিতা বজলুল রহমান ও মা রিজিয়া বেগম শোকাহত অবস্থায় বলেন আমার ছেলেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। আমরা পুত্র হত্যার বিচার দাবী করছি।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ঘটনার দিন উখিয়া থানায় জামাতা আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী লিপিবদ্ধ করে। এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা রহস্য। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রিয়তোষ বড়–য়া জানান, পুলিশ মর্মহত ঘটনাটি গুরুত্বের সহকারে তদন্ত করছে। পোষ্টমেটাম রির্পোট আসলে হত্যার আসল রহস্য জানা যাবে।

পাঠকের মতামত: