ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় খেলার মাঠ দখল থামছেই না

এবার উজানটিয়া স্কুল মাঠ দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া ::

পেকুয়ায় খেলার মাঠগুলো দখলের প্রতিযোগিতা যেন থামছেই না। উপজেলার একমাত্র ক্রীড়া কমপেহ্মক্সটি (জিয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স) বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে খেলাধুলার পরিবেশ নষ্ট করার পর এবার উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটিও দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিমদাদ মিয়ার ঘাট এলাকায় অবস্থিত উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দীর্ঘ ৬৬ বছরের পুরোনো খেলার মাঠটি ওই স্কুলেরই পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজেই দখল করে নিয়ে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছেন।

জানা যায়, উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও তার সহোদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি হানিফ চৌধুরী মিলে স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে উজানটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথভাবে ব্যবহার করে আসা খেলার মাঠটি দখল করে সেখানে স্কুলমুখী করে টিনশেড মার্কেট নির্মাণ করছেন। এতে খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে পড়ায় দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের খেলার মাঠটি দখলমুক্ত রেখে সেখানে খেলাধুলার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় অভিভাবক দেলওয়ার করিম চৌধুরী গত ৫ মার্চ পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালে উজানটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একই স্থানে ১৯৮২ সালে উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকে ৪ শতাধিক এবং মাধ্যমিকে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ৬৬ বছর ধরে স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসা মাঠটির একাংশ দখল করে নিয়েছেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজেই। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পথ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি পড়ালেখার পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলেও আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।

উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘তারা পাউবো থেকে খেলার মাঠটি লিজ নেয়ার কথা বলে সেখানে স্কুলমুখী দোকানঘর নির্মাণ করছেন। দুটি স্কুলের খেলারমাঠ দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পথ রুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হবে। কেননা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই ছাত্রী। আর সেখানে স্কুলমুখী একটি মার্কেট হলে ছাত্রীদের ইভটিজিংসহ নানামুখী সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

অভিযোগকারী দেলওয়ার করিম চৌধুরী বলেন, ‘ওনিই স্কুলের সভাপতি, ওনিই স্কুলের শিক্ষক, তিনিই আবার স্কুলের জমি দখল করে মার্কেট বানাচ্ছেন। তিনি যেন ‘একাই একশ’। অথচ সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালায় একজন শিক্ষক তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার কোনো বিধান নেই। তবুও তিনি সভাপতি।’ আমরা এলাকার সচেতন অভিভাবক হিসেবে স্কুলের মাঠটি দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যেখানে মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে সেটি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সেখানে মার্কেট নির্মিত হলে স্কুলের পড়ালেখার পরিবেশের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।’

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি হানিফ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি আমাদের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।

এছাড়াও যেখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সে জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নিয়েছি। শুধু সেটি নয় বেড়িবাঁধটিও তার নামে লিজ নেয়া আছে বলে দাবি করেন তিনি। হানিফ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেকটি জায়গায় রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে একটি ঘর উঠেছে। কিন্তু কেউ এটির ব্যাপারে তো কোনো অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, ভাঙলে সব অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে হবে, তারপর আমারটিও তুলে নেব।’

এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল করিম জানান, ‘এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমরা হাতে পেয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে সাথে নিয়ে পাউবোর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে যদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে কোনো ব্যক্তিকে তা লিজ দেয়ার কথা নয়। মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি লিজ দিয়ে থাকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি সরকারি জমি, যাতে বেদখল হয়ে না যায় সেজন্য।

তারপরও আমি বিষয়টি নিজেই দেখে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

পাঠকের মতামত: