ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সোনালী ব্যাংক নিয়ে বিপাকে কক্সবাজারের ৩৬ ব্যাংক

images1নগদ টাকা জমা রাখতে গিয়ে কক্সবাজারের ৩৬ টি ব্যাংক স্থানীয় সোনালী ব্যাংক নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছে। সোনালীর ভল্টে এসব ব্যাংকের শাখাগুলোর কোটি কোটি  নগদ টাকা জমা রাখার কথা। কিন্তু সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত দুই সপ্তাহ ধরে নগদ টাকার চালান জমা নিতে গড়িমসি করছে। অভিযোগ উঠেছে, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে ভল্টে টাকা জমা রাখতে গড়িমসি করায় অন্যান্য সবগুলো ব্যাংক বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে। এ সুযোগে ব্যাংকটিতে অবৈধ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে। বড় প্রশ্ন উঠেছে-একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দিকে কিভাবে হাত পাতে ?
কক্সবাজারের এসব ব্যাংকগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই বর্তমানে বিপুল অংকের নগদ টাকার স্তুপ জমে পড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এমনকি নগদ টাকা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে। কেননা নিজস্ব ব্যাংক ভল্টে নির্ধারিত অংকের বেশী টাকা থাকলে কর্মকর্তারা নানা শংকায় থাকেন। এসময় কোন অঘটন ঘটলে সেজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহিতা যেমনি রয়েছে তেমনি টাকার বীমা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। যেহেতু ব্যাংকে নির্ধারিত অংকের বেশী টাকা থাকলে সেই অংকের টাকার জন্য বীমা করা থাকেনা।
আর এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, কক্সবাজার সোনালী ব্যাংকের ভল্টে নগদ টাকা রাখার মত স্থানের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের ভল্টে নগদ টাকা রাখার যে অংক  (গোপনীয়) নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে টাকা। কক্সবাজারে দিন দিন ব্যাংকের শাখা বেড়ে গেছে কিন্তু সেই হারে সোনালী ব্যাংকের সার্ভিস সুযোগ বাড়ানো হয়নি। কক্সবাজার সোনালী ব্যাংক থেকে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ টাকার চালান পরিবহনেও রয়েছে নানা সমস্যা। ফলে কক্সবাজারের ব্যাংকিং খাতে দিন দিন বাড়ছে সমস্যা।
স্থানীয় ব্যাংকিং সুত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান কক্সবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন শাখা নেই। এ কারণে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের শাখাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের যাবতীয় কাজ চালানো হয়। নিয়ম মাফিক ব্যাংকের নিজস্ব ভল্টে মওজুদ রাখার নির্ধারিত অংকের চেয়েও টাকার পরিমাণ বেশী হলে তখনই সোনালী ব্যাংকের ভল্টের আশ্রয় নিতে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় পর্যায়ের বিনিয়োগ তথা ব্যবসা-বাণিজ্য উদ্বেগজনক হারে হ্্রাস পেয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের স্থানীয় গ্রাহকদের হিসাবে স্তুপ পড়ে রয়েছে বিপুল অংকের ‘অলস’ টাকা। এ প্রসঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী বলেন-‘কক্সবাজার সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ভল্টে টাকা রাখার স্থান নেই সহ আরো নানা অজুহাতে আমাদের ব্যাংকের টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এতে করে আমাদের শাখার ভল্টে অতিরিক্ত নগদ টাকার মওজুদ নিয়ে শংকায় থাকতে হচ্ছে।’
ওয়ান ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক খোদা বক্স তৌহিদ বলেন-‘আজও (মঙ্গলবার) সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার ব্যাংক থেকে পাঠানো স্বল্প অংকের টাকার একটি চালান রাখতেও গড়িমসি করেছে।’ তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা রাখতে কোন অবৈধ খরচ করতে হলে সেটা পুষিয়ে নিতেও বেশ কষ্ট হয়। এই ব্যবস্থাপক আরো অভিযোগ করে বলেন-আমার ব্যাংকের গ্রাহকদের নতুন টাকার আবদার মিটাতে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের হাতে নগদ নারায়ণ দিতেই হয়। এই ‘উপরি’ দেয়ার পরই ঈদ-কুরবানের সময় টাকার নতুন নোট দেয়া হয়।
এসব ব্যাপারে কক্সবাজার ব্যাংকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ (এসআইবিএল) এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন-‘কক্সবাজার সোনালী ব্যাংক নিয়ে বাস্তবে আমরা স্থানীয় অন্যান্য ব্যাংকগুলো গুরুতর সমস্যার মুখে পড়েছি। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও তাদের স্বল্প পরিসরের স্থান নিয়ে সংকটে রয়েছে-এটাও সত্যি।’
কক্সবাজার সোনালী ব্যাংকের সহকারি জেনারেল ব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ ইউসুফ এ সব বিষয়ে বলেন-‘কক্সবাজারে ব্যাংকের এতগুলো শাখার সার্ভিসে সোনালী ব্যাংক স্থানীয় শাখাটির স্বল্প সুযোগ-সুবিধা  দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তাই নানা সমস্যা লেগেই রয়েছে।’ তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে চট্টগ্রামে নগদ টাকার চালান পাঠাতে এ খাতে যে পরিমাণ খরচ হয় তা বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে গড়িমসি করে এজন্যই এসব নানা কথা উঠে। গত সপ্তাহে একটি বড় চালান পাঠানো হলেও আবারো ভল্ট পূর্ণ হয়ে গেছে। অবৈধ লেনদেন নিয়ে তিনি বলেন-বলাবলির কথা আমারও কানে এসেছে। আমি এসবও লিখেছি উর্ধতন মহলের নিকট। – See more at: http://www.dainikcoxsbazar.net/?p=81949#sthash.6QJf9Dho.dpuf

পাঠকের মতামত: