ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইট ভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ, বৃক্ষশূন্য পাহাড়, কালো ধোঁয়ায় ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

বাঁশখালী প্রতিনিধি ::

বাঁশখালী উপজেলায় অসংখ্য ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে পাহাড়ি গাছ। কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে পাহাড় যেমন বৃক্ষশুন্য হয়ে পড়ছে, অপরদিকে পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠা ইট ভাটার কারণে এলাকার মানুষের মাঝে নানা ধরনের রোগব্যাধিও ছড়িয়ে পড়ছে।

বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোর মধ্যে রয়েছে– পুকুরিয়ায় ১টি, সাধনপুর লটমনি পাহাড়ে ৩টি, বাঁশখালী সাতকানিয়া সীমান্তের চূড়ামণি এলাকায় ২টি, বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে ৩ টি, চাম্বলে ১টি, শেখেরখীলে ১টি। দক্ষিণ জলদী পাহাড় সংলগ্ন ১টি ইট ভাটা থাকলেও তা পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন পুকুরিয়া চা–বাগান সংলগ্ন এলাকায় সরকারি নির্দেশনা না মেনে জিকজ্যাগের পরিবর্তে লম্বা চিমনি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ১টি ইট ভাটা। বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে কৃষি জমিতে সামান্য ব্যবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ৩টি ইটভাটা।

এক কিলোমিটারের ব্যবধানে গড়ে উঠা তিনটি ইটভাটা এলাকার জনগণের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইটভাটাগুলো অত্যন্ত কাছাকাছি ও লোকালয়ের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের যেমন মারাত্মক ক্ষতি করছে, তেমনি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ধানি জমি।

সূত্রমতে, ইট ভাটায় একবার ইট পোড়াতে প্রায় চার হাজার মণ কাঠ পোড়াতে হয়। এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেই। যার ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল, বৃক্ষশুন্য হয়ে পড়ছে পাহাড়। পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন অবৈধভাবে ইট ভাটাগুলোতে পাহাড়ি কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে যা প্রশাসনের নজরদারির বাইরে।

চাম্বল বনবিট কর্মকর্তা শেখ আনিসুজ্জামান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে পরিবেশ বান্ধব নিয়ম অনুসারে ইটভাটা হলে কোন আপত্তি নাই। যে সমস্ত ইটভাটা পরিবেশ বান্ধব নিয়ম না মেনে পাহাড়ি মাটি বা কাঠ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কেউ যাতে পাহাড় থেকে মাটি ও কাঠ না কাটে সেই জন্য কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিগত কয়েকবছর আগে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অভিযান করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবরোধের মুখে পড়তে হয়, তা ছাড়া অভিযানে নানাভাবে বেগ পেতে হয়।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, যেসব ইট ভাটা অবৈধভাবে পাহাড়ি কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটাগুলো অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: