ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় নৌ-বাহিনীর অধিগ্রহণকৃত জমি বানিজ্য: ওয়াসিম চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিলো ৩ কোটি টাকা!

পেকুয়া সংবাদদাতা :

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্মিতব্য সাবমেরিন সৌ-ঘাঁটির জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি লাগিয়ত করে মগনামার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের নেতৃত্বে চার জনের একটি সিন্ডিকেট স্থানীয় লবণ চাষীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে এক অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে! ওয়াসিমের নেতৃত্বে ওই সিন্ডিকেট এসব জমি নৌ বাহিনীর কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে মর্মে এলাকায় ভূঁয়া প্রচার করে চলতি মৌসুমের শুরুতে লবণ চাষের জন্য এলাকার চাষীদের লাগিয়ত করে। এদিকে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে মগনামা সাব মেরিন নৌ-ঘাঁটির জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে লবণ চাষীদের সরে যাওয়ার জন্য গতকাল ৩০ জানুয়ারী পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু লবণ চাষীরা নৌ বাহিনীর অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে গতকাল পর্যন্তও সরে যায়নি। চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ইন্দনে লবণ চাষীরা নৌবাহিনীর সিদ্ধান্তকে অমান্য করছেন বলে এলাকার সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন। এদিকে নৌ বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমি লাগিয়ত করে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় মগনামার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা। এর আগেও ওয়াসিমের বিরুদ্ধে সরকারী প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অবিযোগে দূর্নীতি প্রতিরোধ এক নারী ইউপি সদস্য আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিল। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও নানান অপকর্ম ও অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় ওয়াসিমের পেকুয়া থানা ও আদালতে বহু মামলা হয়।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের জন্য পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ৪১৯ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। জমিগুলোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণের টাকা মালিকদের কাছে গত এক বছর পূর্বে জেলার এলও অফিস থেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে নৌ-বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। নৌবাহিনী সেসব জমির চারপাশে কাটা তারের ঘেরা দিয়ে দখলে নিয়েছে। আর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপন কাজের ধীর গতিকে পূঁজি করে এসব জমিতে চলতি লবণ মৌসুমের শুরুতে লবণ চাষের জন্য চেয়ারম্যান ওয়াসিম স্থানীয় চাষীদের কাছে লাগিয়ত করে। পরে চাষীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ওয়াসিমসহ স্থাণীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মিলে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। নৌ বাহিনীর জমি স্থানীয় লবণ চাষীদের ইজারা দেওয়ার পূর্বে ওয়াসিম নিজে প্রথম পক্ষ সেজে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা, বিএনপি দলীয় পেকুয়া উপজেলার এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক পদবীধারী নেতার (যিনি বিগত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি যোগ দিয়েছিলন) মধ্যে একটি ব্যবসায়ীক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর চলতি লবণ মৌসুমের শুরুতে নৌবাহিনীর অধিগ্রহণ করা মোট জমিতে ৩১৩ একর চাষাবাদের জন্য চাষীদের লাগিয়ত করা হয় প্রতি কানি ২০-৩০ হাজার টাকা ধরে। সে হিসেবে ওয়াসিমের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট নৌ বাহিনীর অধিগ্রহণকৃত জমি নিয়ে অবৈধ উপায়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মগনামার সেই জঘন্য কুখ্যাত চেয়ারম্যান ওয়াসিম নৌ বাহিনীর কাছ থেকে জমি ইজারার ভূয়া তথ্য প্রচার করে চাষীদের কাছ থেকে প্রতারণার আশ্রয় টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় এলাকার সচেতন মহল নৌবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরেও নৌ বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ আইন মতে, অধিগ্রহণ করা জমিতে নির্দিষ্ট প্রকল্প কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ভূমির মালিক সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে চাষাবাদ করতে পারেন। কিন্তু ওয়াসিমের নেতৃত্বে চারজনের সিন্ডিকেট আইনেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নৌ বাহিনীর এসব জমি জোরপূর্বক দখল করে স্থানীয় চাষীদের লাগিয়ত করে।

মগনামার বাসিন্দা সোলতান মাহমুদ রিপন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, চক্রটির এ অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ যাতে সোচ্চার হতে সাহস না পায়, সেজন্যে পুরো মগনামা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সশস্ত্র সন্ত্রসী বাহিনী। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের জবর দখল করতে মগনামায় ব্যাপকহারে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিম বাহিনী। তারা পুরো মগনামাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

অধিগ্রহণকৃত জমিতে চাষাবাদ সর্ম্পকে জানতে নৌ-বাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যতটুকু জানি পেকুয়ায় অধিগ্রহণ হওয়া জমি লবণ চাষে কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। কেউ চাষে নামলে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পেকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের বলেন, নৌবাহিনী জমিগুলো কাউকে ইজারা দেয়নি। আমিও কাউকে চাষাবাদ করতে লাগিয়ত দিইনি। অধিগ্রহণে আমাদের মালিকানাধীন যেসব জমি পড়েছে তা আমরা চাষ করছি। বাকিগুলোর খবর আমি জানিনা। আমার কোন বাহিনী নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, নৌবাহিনীর জন্য অধিগ্রহণ করা জমি কাউকে চাষ করতে ইজারা দেয়া হয়নি। এসব জমির দেখভালের দায়িত্ব এখন নৌ কর্তৃপক্ষের।

পাঠকের মতামত: