ঢাকা,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

লোহাগাড়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

জাহেদুল ইসলাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ চারজনকে শর্তক করে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি)কে শাহজাহানকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চারজন জনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আজ দ্বিতীয় দিনের মতো হাইকোর্টে হাজির হয়ে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার ঘটনায় নি:শত ক্ষমা প্রার্থনা ও ভবিষ্যাতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করার পর সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর এইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও আইনজীবী মকবুল আহমেদ।অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
দুই পুরিয়া গাঁজা পাওয়ার অভিযোগে ৮ মাসের সাজাপ্রাপ্ত বেলাল উদ্দিন রিট আবেদন দায়ের করেন। এর পর গত ১৪ জানুয়ারি লোহাগাড়ার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম, ওসি মো. শাহজাহান, এসআই হেলাল খান ও ওয়াসিমকে তলব করেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ২৮ জানুয়ারি প্রথম দিন এবং পরের দিন আজ সোমবার তারা উপস্থিত হয়েছেন।
রোববার হাইকোর্টের তলবে আদালত কক্ষে হাজির হন, লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান এবং ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়া।তারা আজও আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এসময় আদালতকে বলেন, ‘কিছু লোকের (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট)এ ধরনের অপকর্মের কারনে মোবাইল কোর্ট পপুলারিটি (জনপ্রিয়তা) হারিয়েছে।এ সময় এইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী সম্পুরক আবেদন করার জন্য সময় আবেদন করলে আদালত এবিষয়ে আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান ও ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়াকে রোববার (২৮ জানুয়ারি) আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
সঙ্গে সঙ্গে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজা সাজানো বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং যারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। সেইসঙ্গে রিট আবেদনকারীকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।স্বরাষ্ট্রসচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর রাত নয়টায় লোহাগাড়ার বেলাল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন একটি ফৌজদারি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের জব্দ তালিকায় দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর রাত নয়টায় বেলালের কাছ থেকে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় বেলালকে আট মাসের জেল দেন।এরপর ‘সাজানো’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন।

পাঠকের মতামত: