ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্যাবাসন এড়াতে কৌশলে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা

নিউজ ডেস্ক ::

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য ঘুমধুম ও নয়াপাড়া ক্যাম্প এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্প।

পর্যায়ক্রমে আরো তিন ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

উভয় দেশের সম্মতিক্রমে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত মনে করে ক্যাম্পে বসবাসরত কিছু কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওই সব রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে মামলা থাকায় তারা সেদেশে আর ফিরতে চায় না। তাই প্রত্যাবাসন শুরুর আগেই তারা দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প ত্যাগ করছে সপরিবারে।

কক্সবাজার উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা চেকপোস্ট অতিক্রমকালে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন যাত্রীবাহী যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নানের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,কক্সবাজার জেলা পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রামভিত্তিক সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত ১১টি চেকপোস্ট ছাড়াও বিভিন্ন থানা পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সদস্যরা নিয়মিত যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়াও যে কোনো ধরনের যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে। তারা যে কোনো ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র প্রদান করতে বলছে।

সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে ওই সব যাত্রীকে উদ্ধার করে নিকটস্থ অথবা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারপরও বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে তাদের স্বজনদের কাছে চলে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৭১২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবার বিভিন্ন অভিযোগে ৫৫২ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে অধিকাংশ রোহিঙ্গারা সপরিবারে তাদের গন্তব্য স্থানে চলে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করে ক্যাম্পে ফেরত আনতে না পারলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পুরোপুরি সফল হবে না।

কুতুপালং ক্যাম্পের হেড মাঝি আবদুর রশিদ, বালুখালী ক্যাম্পের হেডমাঝি লালু মাঝি, থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী, বালুখালী ২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি আবু তাহেরসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উধাও হয়ে গেছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিত্তশালী যাদের অনেক স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা রয়েছে। তারা স্বাচ্ছন্দ্য ও স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে চলে গেছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছে। আবার অধিকাংশ হতদরিদ্র ছিন্নমূল পরিবার বিভিন্ন শহরে উপার্জনের মাধ্যমে বসবাসের জন্য ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।

মাঝিরা আরো জানান, ক্যাম্প ত্যাগ করা লোকজনের মধ্যে এমন কিছু সন্ত্রাসী রয়েছে যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যাম্পে আসার পর থেকে তাদের আর দেখা মেলেনি। এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারে একাধিক মামলা থাকায় তারা প্রত্যাবাসন ইস্যুকে ভয় পাচ্ছে। যে কারণে আগে ভাগেই ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে উখিয়া থানা কম্পাউন্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৭ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার থানার নিচতলায় সিঁড়িঘরে বসে আছে। ডিউটি অফিসার বিঞ্চু বড়ুয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এসব রোহিঙ্গা কুতুপালং মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে সপরিবারে পালিয়ে যাচ্ছে। মরিচ্যা চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা এসব রোহিঙ্গার উদ্ধার করে থানায় ফেরত পাঠিয়েছে।

এদের কি করা হবে জানতে চাইলে ওই ডিউটি অফিসার জানান, তাদের পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে।

ওই রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্য অলি উল্লাহ জানান, চট্টগ্রামের হালি শহর এলাকায় তাদের এক ছেলে গার্মেন্টে চাকরি করেন। তাই তারা ছেলের কাছে যাচ্ছে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল জানান, ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, পুলিশ রোহিঙ্গাদের ওপর সজাগ দৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। যাতে তারা ক্যাম্পের বাইরে কোথাও যেতে না পারে। যদিও বা কিছু কিছু রোহিঙ্গা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জেলা শহরে আশ্রয় নেয়, সেখানকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের উদ্ধার করে পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত পাঠাবে।

পাঠকের মতামত: