ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ধীরগতি

বাঁশখালী (চট্রগ্রাম) প্রতিনিধি :

বাঁশখালীর উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বেড়িবাঁধ নিদিষ্ট সময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ জনগণ। চলতি বছরের জুন মাসে কাজের শেষ হবার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি পাউবো সূত্র মতে ৪৩ শতাংশ। বর্তমানে ব্লক নির্মাণ ও কিছু মাটির কাজ চললেও বৃহৎ কোন কাজ করতে পারছে না ঠিকাদারগণ।

তবে পানি নেমে না যাওয়ায় কাজে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। কাজের শুরু থেকে বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের কথা উঠলেও পাউবো কর্মকর্তাদের মতে সিডিউল অনুসারে কাজ হচ্ছে বলে তাদের দাবি।

বাঁশখালীর উপকূলবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থায়ী এ বেড়িবাঁধ কোন ত্রুটি ছাড়াই কাজের সমাপ্তি হবে এ আশা করছে সাধারণ জনগণ। তবে বর্তমানে বসানো ব্লক গুলো ঢেউ এবং জোয়ারের তোড়ে যেভাবে দেবে যাচ্ছে তাতে উপকূলীয় জনগণ বেড়িবাঁধ নির্মাণে যেভাবে আশান্বিত হয়েছিল সেভাবে শংকিত হয়ে পড়ছে বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে। তবে পাউবো কর্মকর্তারা ঠিকাদার থেকে কাজ বুঝে নেওয়ার আগে সব ব্লকগুলো ঠিকঠাক করা হবে বলে জানান তারা।

বাঁধ নির্মাণ কাজে বালি এবং সিমেন্টের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে বৃহৎ এই প্রকল্পের স্থানীয় সাব ঠিকাদারগণ নিম্নমানের বালি ও সিমেন্ট সরবরাহ দিচ্ছে বলে নানা ভাবে অভিযোগ উঠছে। তবে সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে পাউবো কর্মকর্তারা।

বাধেঁর তলদেশ ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য, উপরের প্রস্থ ১৪ ফুট ও উচ্চতা ১৮ ফুট করার কথা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। বর্তমানে বাধেঁ দেওয়া মাটি অনেক জায়গায় সরে যাচ্ছে। ফলে বাঁধের নানাবিধ ক্ষতি হতে পারে বলে সাধারণ জনগণের আশংকা।

বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ৩৪টি প্যাকেজে চলমান এ কাজের এখনও পর্যন্ত ৪৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাঁশখালীতে বর্তমান সরকার মতায় আসার পর যে কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ। ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীজ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ–২.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উক্ত টাকা ব্যয়ে।

২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ পায় তারা।

বাহারছড়া ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টার প্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স। ফোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি এর সমন্বয়ে বাঁধের ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রিজের কোজিং ও পুনরাবৃত্তিকরণ ৯.৯০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ৩.৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাবৃত্তিকরণ ২.০০ কিলোমিটার, স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ। এ ব্যাপারে পাউবো উপ–বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান বেড়িবাঁধের কাজ যাতে সুষ্ঠু এবং সিডিউল অনুসারে হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। তারপরেও যদি কোন রূপ সমস্যা হয় তা কাজ বুঝে নেওয়ার আগে যথাযথ সংস্কার করে বিল প্রদান করা হবে।

তিনি বলেন বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজে অনেকটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা যথাসময়ে কাজ শেষ করার। বর্তমানে পুকুরিয়া, বৈলগাঁও, বাহারছড়া ও গন্ডামারায় কাজ চলছে। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আজাদীকে জানান।

বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ যাতে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কোন ধরনের অনিয়ম করা হলে তা কোন অবস্থাই মেনে নেওয়া হবে না বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ নিয়ে আলোচনাসহ নির্দিষ্ট মেয়াদেও কোন ধরনের অনিয়ম ছাড়া শেষ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের তদন্ত টিমের মাধ্যমে কাজের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: