ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটা থেকে খাজনা আদায় মাত্র ৩ শতাংশ, ৭৭ শতাংশই অবৈধ

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::    জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রামে ইটভাটা রয়েছে ৪০৮টি। এরমধ্যে বৈধ ইটভাটা হচ্ছে ৯৬টি। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৩১২টি। নীতিমালা–বহির্ভূত ইটভাটা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেই দায় সারছে প্রশাসন। উপরন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।
জেলা প্রশাসনের জেলার মাসিক রাজস্ব সভা কার্যতালিকা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭–১৮ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১২ টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন কর আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭ হাজার ৮ টাকা। শতকরা ৩ ভাগ কর আদায় করা হয়েছে।
সভায় চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় কার্যক্রম জোরদার করার জন্য উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের

প্রতি অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর জানান, ইটভাটার উচ্ছেদ মামলা রয়েছে ১০০টি। ৩০টি উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ৩০টির বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রামে ৪০৮টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৯৬ টি। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৩১২ টি।
অবৈধ ইটভাটা থেকে সরকার কোনো প্রকার রাজস্ব পাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লাইসেন্স না থাকলে কোনো ধরনের কর বা রাজস্ব আদায়ের সুযোগ নেই। তবে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায়ে কোনো বাধা নেই। ইটভাটার মালিকদের ভূমির বিপরীতে খাজনা পরিশোধ করতে হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত উন্নয়ন করের বিপরীতে আদায় হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব সভার হিসাবে দেখা যায়, নগরীর সদর সার্কেল, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও, কাট্টলি এলাকায় কোনো ইটভাটা নেই। মিরসরাই উপজেলায় খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ এক হাজার টাকা। আদায় করা হয়েছে ৪০ হাজার ৭২০ টাকা। সীতাকু– উপজেলায় কর ধরা হয়েছে ৭৪ লাখ ৩ হাজার ৯৫১ টাকা। আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭৩৫ টাকা। সন্দ্বীপে খাজনা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে সব টাকা আদায় করা হয়েছে। ফটিকছড়িতে ৮১ লাখ ৩ হাজার ১৮০ টাকার মধ্যে কোনো কর আদায় করা হয়নি। হাটহাজারীতে ৯১ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে কোন খাজনা আদায় করা হয়নি। রাঙ্গুনিয়ায় ৪০ লাখ ৬ হাজার ৪৪৭ টাকার মধ্যে আদায় করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৬০ টাকা। বোয়ালখালীতে ৮৪ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে কোনো খাজনা আদায় করা হয়নি। পটিয়ায় ৪২ হাজার ৯৭৬ টাকার মধ্যে কোনো খাজনা আদায় করা হয়নি। চন্দনাইশে ৪ লাখ ৭১ হাজার ২৯২ টাকার মধ্যে কোনো খাজনা আদায় করা হয়নি। সাতকানিয়ায় ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ টাকার মধ্যে কোনো খাজনা আদায় করা হয়নি। লোহাগাড়ায় ৮ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৮ টাকার মধ্যে কোনো খাজনা আদায় করা হয়নি। বাঁশখালীতে ৯৮ হাজার ৮০৮ টাকার মধ্যে কোনো আদায় নেই।
পরিবেশ আইনের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮ ধারায় রয়েছে, আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত, বাণিজ্যিক এলাকা, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষি জমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন সদরের এক কিলোমিটার ও বনভূমি, জলাভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদ– ও ৫ লাখ টাকা অর্থদ– বা উভয় দ–ে দ–িতের বিধান রয়েছে।
কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে আবাসিক–জনবসতি এলাকা, ফসলি জমি, বনভূমি ও নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। বছরের পর বছর চলে আসছে অবৈধ এসব ইটভাটা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ইটভাটা চলে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে উপজেলা প্রশাসন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, ইটভাটাকে পরিবেশ উপযোগী করতে ইটভাটার চিমনির উচ্চতা ১২০ ফুট নির্ধারণ এবং চিমনি তৈরিতে জিগজ্যাগ কিলন, হাইব্রিড হফম্যান কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফট কিলন, টানেল কিলন পরিবেশ সম্মত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামে ইটভাটা রয়েছে ৩৪৯ টি। এরমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির কিলনের সংখ্যা ৪৩ টি। আর ফিক্সড চিমনি কিলনের সংখ্যা ৩০৬টি।
তবে জেলা প্রশাসক অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রতিবছর ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ৩৪৯ টি ইটভাটার মধ্যে ৩০৬টি চলছে ছাড়পত্র ছাড়াই। রাউজানে ৩৬টি, ফটিকছড়িতে ৪৪টি, সাতকানিয়ায় ৩৮টি, হাটহাজারী ৩৯টি, রাঙ্গুনীয়ায় ৬৯টি, চন্দনাইশে ৩১টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, আনোয়ারায় দুটি, বাঁশখালীতে দুটি, সন্দ্বীপে চারটি, মিরসরাইয়ে আটটি, সীতাকু–ে দুটি, বোয়ালখালীতে সাতটি, পটিয়ায় তিনটি ইটভাটা ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: