ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে দাঁড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্ব, ২০ কক্ষ ভাংচুর, আহত ৪, আটক ১

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ::

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলে তা ছড়িয়ে পড়ে। ইট–পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি উভয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রায় ২০টি কক্ষ ভাংচুর করেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে। এতে দুজন গুরুতরসহ ৪ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে চমেকে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষে জড়ানো দুটি পক্ষই নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদের মধ্যে ভিএক্স গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির উপ–দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল (বহিষ্কৃত) ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন একই কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে মিছিলের প্রস্তুতি নেয় নাছির গ্রুপ। এসময় সামনের সারিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ভিএক্স নেতা কর্মীদের সাথে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে সিক্সটি নাইন ভিএক্স গ্রুপকে ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দফায় সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। কিছুক্ষণের জন্য থামলেও প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আবারো দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এসময় সোহরাওয়ার্দী হলের ২০টি কক্ষ ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উভয়ের মাঝে অবস্থান নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সামাল দিতে না পেরে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। পরে সিক্সটি নাইন শাহজালাল ও ভিএক্স সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় উভয় পক্ষের ৪ জন আহত হন। তবে দুইজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়। বাকিদের চবি মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে নাজমুস সামির বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ও সাইদ আহমেদ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে আহত বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার মাত্র দুদিনের মাথায় ছাত্রলীগের এমন সংঘর্ষে নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সংঘর্ষের বিষয়ে ভিএক্স গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের উপর হামলা করেছে। তারা আমাদের হলের রুম ভাংচুরসহ নেতাকর্মীদের মারধর করেছে।’

নবীন শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো ঝামেলার পক্ষ পাতি না। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে যে তা আমরা জানতাম না। তারা বিশেষ করে আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে সিক্সটি নাইন গ্রুপ নেতা ও সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ‘জুনিয়রদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে সিনিয়ররা বসে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছে।’

তবে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বানচালের উদ্দেশ্যে এ হামলা উল্লেখ করে একই কমিটির সিনিয়র সহ–সভাপতি মনসুর আলম আজাদীকে বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগের সিনিয়র এক নেতার উপর ছাত্রদলের নবীনগর শাখার সহ–সভাপতি মিজানুর রহমান বিপুলের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। তারই পরিপ্রে িতে আমাদের জুনিয়ররা তাদেরকে প্রতিহত করে। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন অবস্থায় তারা হলে থাকা আমাদের জুনিয়রদের রুম ও মোটরবাইক ভাংচুর করে। পরে বিষয়টির পদক্ষেপ নিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাই।’ তিনি বলেন, ‘তারা ছাত্রলীগের ভিতরে ঢুকে জামাত–শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’

এ বিষয়ে চবি সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে তাকে হাটহাজারী থানায় রাখা হয়েছে। আটককৃত আরিফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের ২০১৪–১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি ভিএক্স গ্রুপের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে থানায় রাখা হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: