ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাঁশখালীতে ১০৪ অবৈধ স’ মিলে ৫০ কোটি টাকার চোরাই কাঠ মজুদ

বাঁশখালী প্রতিনিধি :: বাঁশখালীতে ১০৪ অবৈধ স’ মিলে ৫০ কোটি টাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই কাঠ মজুদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা নানামুখী দোহাই দিয়ে নীরব রয়েছেন। এ কারণে বনদস্যুরা বাধাহীন নির্বিচারে গাছ কাটছে আর মজুদ করছে। পুঁইছড়ি ও চাম্বল সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গত ১৫ দিনের মাথায় অন্ততঃ ১০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, বনাঞ্চলের গাছ বনদস্যুরা কাটছে না, বন কর্মকর্তারা কাটছে। বন কর্মকর্তারা নিজেদের বনের মালিক মনে করে নির্বিচারে গাছ বিক্রয় করছে। ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তারা বাঁশখালীর বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার ভাগ নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। না হয়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কিভাবে নির্বিচারে কাটা যায়? বাঁশখালীর বনাঞ্চল তো এখন মরুভূমি। বদলি ছাড়াই বন কর্মকর্তারা ১০/১৫ বছর ধরে চাকরি করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীতে ১২২টি স’ মিলের মধ্যে মাত্র লাইসেন্স রয়েছে ১৮টির। বাকি ১০৪টি স’ মিলই অবৈধ। একশ গজ, দুইশ গজ ব্যবধানে পাহাড়ি এলাকায় স’ মিল বসিয়ে বনখেকোরা দেদারছে গাছ বেচা-কেনার হাট বসিয়েছে। পাশাপাশি কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা মাসোহারা নিয়ে স’মিলগুলোকে অবৈধভাবে গাছ বিক্রয়ের লাইসেন্স দিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বন তারা দালালদের মাধ্যমে গাছ বিক্রয়ে নেমে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি স’মিলে লাখ লাখ টাকার অবৈধ পাহাড়ি কাঠ পড়ে আছে। বনবিভাগের কেউ তা আটক করে না। স্থানীয় জনসাধারণের জরিপে এ গাছের মূল্য ৫০ কোটি টাকার অধিক হবে। প্রতি স’মিলে আশি লাখ/নব্বই লাখ টাকার কমে গাছ নেই। বাঁশখালীর প্রধান সড়ক সংলগ্ন স’মিলগুলোতে সড়কের ওপরেই রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল গাছ। এতেও স্পষ্ট, বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে লাগামহীন দিন-রাত গাছকাটা চলছে। বাঁশখালীর অধিকাংশ বনাঞ্চল নিঃশেষ হয়ে গেছে। পত্রিকায় গাছকাটার সংবাদ ছাপানো হলে কয়েকদিন কাটা বন্ধ থাকে। পড়ে আবার লাগামহীনভাবে গাছকাটা চলে।
বাঁশখালীর জলদি, চাম্বল, বৈলছড়ি, সাধনপুর, পুকুরিয়া, পুঁইছড়ি, নাপোড়া এসব এলাকা ঘুরে স্থানীয় গ্রামবাসী রকিব উদ্দিন, ঝুন্টু দাশ, আব্দুর সোবাহান, ছোটন দাশ, জানে আলম, খোরশেদ মিয়াসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ের গাছকাটা প্রতিদিনই চলছে। ১০/১৫ বছর ধরে বেশ কয়েকজন বিট কর্মকর্তা বাঁশখালীতে কর্মরত। কয়েকজন বিট কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বনাঞ্চলের গাছ বিক্রয়ের সাথে সরাসরি জড়িত। গ্রামবাসী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তদন্তে এসে কাটা গাছ বিক্রয়ের ভাগাভাগির টাকা নিয়ে তারাও নীরব থাকেন। কারো বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বরং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাছ বিক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করে। শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘বাঁশখালী ইকোপার্কের সেগুন বাগান বিক্রয় করে কতিপয় বন কর্মকর্তা টাকা আত্মসাত করলেও কারো বিরুদ্ধে শাস্তি হয়নি’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স’ মিলের কয়েকজন বৈধ লাইসেন্সধারী অভিযোগ করেন, অবৈধ লাইসেন্সধারী স’ মিল মালিকদের দৌরাত্ম্যে আমরা অসহায়। অবৈধ লাইসেন্সধারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে প্রশাসন বৈধ লাইসেন্সধারীদের বিভিন্নভাবে আইনের ফাঁদে ফেলে হয়রানি করে।
বাঁশখালী উপকূলীয় রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী অলিউল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাঁশখালীর মত স’মিল কোন উপজেলায় নেই। উপজেলা উন্নয়ন সভায় এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কতিপয় জনপ্রতিনিধি সরাসরি স’মিল ব্যবসার সাথে জড়িত’। বাঁশখালীর জলদী রেঞ্জের রেঞ্জার জহিরুল কবির শাহীন বলেন, ‘গাছকাটা বন্ধ ও স’মিল বন্ধের ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা নেই বললে ভুল হবে। তবে লোকবলের অভাবে আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছি না। পুঁইছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কিছু কাটা গাছ সম্প্রতি জব্দ করেছি’।

পাঠকের মতামত: