ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বনের কাঠ স’মিল ও ইটভাটায় উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল

বাঁশখালী প্রতিনিধি ::

বাঁশখালীতে ১০৪টি অবৈধ স’মিলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই কাঠ মজুত করা হয়েছে। ইটভাটায়ও পুড়ছে এসব কাঠ।

এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা নানামুখি দোহাই দিয়ে নীরব রয়েছেন। ফলে বনদস্যুরা বাধাহীন নির্বিচারে গাছ কাটছে আর মজুত করছে। পুঁইছড়ি ও চাম্বল সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গত ১৫ দিনে অন্ততঃ ১০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বনাঞ্চলের গাছ বনদস্যুরা কাটছে না, বন কর্মকর্তারা কাটছেন। বনকর্মকর্তারা নিজেদের বনের মালিক মনে করে নির্বিচারে গাছ বিক্রি করছেন। ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তারা বাঁশখালীর বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার ভাগ নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন। না হয়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কীভাবে নির্বিচারে বাধাহীন কাটা যায়? বাঁশখালীর বনাঞ্চল এখন মরুভূমি। বদলি ছাড়া বন কর্মকর্তারা ১০/১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন এখানে। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীতে ১২২টি স’মিলে মাত্র লাইসেন্স আছে ১৮টির। বাকি ১০৪টি স’মিল অবৈধ। মাত্র ১০০ গজ, ২০০ গজ ব্যবধানে পাহাড়ি এলাকায় স’মিল বসিয়ে বনখেকোরা দেদারছে গাছ বেচা-কেনার হাট বসিয়েছে।

পাশাপাশি বনকর্মকর্তারা মাসোহারা নিয়ে স’মিলগুলোকে অবৈধ গাছ বিক্রয়ের বৈধ লাইসেন্স দিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন কর্মকর্তারা নিজেরাই দালালদের মাধ্যমে গাছ বিক্রিতে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি স’মিলে লাখ লাখ টাকার অবৈধ পাহাড়ি কাঠ পড়ে আছে। বনবিভাগের কেউ তা আটক করেন না। স্থানীয় জনসাধারণের এক জরিপে এ গাছের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার অধিক হবে। প্রতি স’মিলে ৮০/ ৯০ লাখ টাকার কমে গাছ নেই। বাঁশখালী প্রধান সড়ক সংলগ্ন স’মিলগুলোতে প্রধান সড়কের উপরই রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল গাছ। বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে দিন-রাত গাছকাটা চলছে। বাঁশখালীর অধিকাংশ বনাঞ্চল ধু ধু মরুভূমিতে পরিণত হয়ে গেছে। পত্রিকায় গাছকাটার সংবাদ ছাপানো হলে কয়েকদিন গাছ কাটা বন্ধ থাকে। পড়ে আবার গাছকাটা চলে।

বাঁশখালীর জলদী, চাম্বল, বৈলছড়ি, সাধনপুর, পুকুরিয়া, পুঁইছড়ি, নাপোড়া এসব এলাকা ঘুরে গ্রামবাসী রকিব উদ্দিন, ঝুন্টু দাশ, আব্দুর সোবাহান, ছোটন দাশ, জানে আলম, খোরশেদ মিয়াসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনে গাছকাটা প্রতিদিনই চলছে। বিরামহীন গাছকাটায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া হয়ে গেছে। এসব পাহাড়ি গাছ বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় স’মিলগুলোতে। পাহাড়ি অবৈধ গাছগুলো স’মিলে ঢুকলে বৈধ হয়ে যায়! বনকর্মকর্তারা স’মিলগুলোতে বসে খোশ গল্প করে নিজেরাই গাছ বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করেন স’মিল মালিকদের।

গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, ১০/১৫ বছর ধরে বেশ কয়েকজন বনবিট কর্মকর্তা বাঁশখালীতে কর্মরত আছেন।

কয়েকজন বিট কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বনাঞ্চলের গাছ বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। গ্রামবাসী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলেও কাজ হয় না। কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয় না।

শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘বাঁশখালী ইকোপার্কের সেগুনবাগান বিক্রি করে কতিপয় বন কর্মকর্তা টাকা আত্মসাৎ করলেও কারো বিরুদ্ধে শাস্তি হয়নি। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স’মিল মালিক অভিযোগ করেন, অবৈধ স’মিল মালিকদের দৌরাত্ম্যে আমরা অসহায়। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে প্রশাসন বৈধ লাইসেন্সধারীদের বিভিন্ন আইনের ফাঁদে ফেলে হয়রানি করে।

বাঁশখালী উপকূলীয় রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী অলিউল ইসলাম বলেন, ‘বাঁশখালীর মতো স’মিল কোনো উপজেলায় নেই। উপজেলা উন্নয়ন সভায় এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কতিপয় জনপ্রতিনিধি সরাসরি স’মিল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ’

বাঁশখালীর জলদী রেঞ্জের রেঞ্জার জহিরুল কবির শাহীন বলেন, ‘গাছকাটা বন্ধ ও স’মিল বন্ধের ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা নেই বললে ভুল হবে। তবে লোকবলের অভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছি না। পুঁইছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কিছু কাটা গাছ জব্দ করেছি। ’

পাঠকের মতামত: