ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিএমপি পুলিশের অপরাধ দমনে বাধা ৪০ ক্যাশিয়ার.?

ক্রাইম প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম :

সিএমপি থানাগুলোর স্বঘোষিত ক্যাশিয়ারদের কারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে  এলাকায় এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ক্যাশিয়ারদের মধ্যে রয়েছে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন দাগী অপরাধীরা। আর কথিত ও স্বঘোষিত এসব ক্যাশিয়াররা চষে বেড়াচ্ছে পুরো মহানগর।

 সিএমপি’র ১৬ টি থানায় ১৬ জন মুল  ক্যাশিয়ারের প্রত্যেকের অধীনে আবার ২/৩ জন করে লোক রয়েছে। এরাও প্রত্যেকে পুলিশের সোর্স কিংবা কোন দাগী অপরাধী। এভাবে ১৬ টি থানায় ৪০ জনের উপরে কথিত ক্যাশিয়ার রয়েছে। মুল ক্যাশিয়াররা ঐসব সাইড ক্যাশিয়ারদের এলাকা ভাগ করে দেয়। এরপর সরাসরি নিজেরা এবং নিজেদের এসব লোকের মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক অপরাধ স্পট এবং অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদার টাকা আদায় করে থাকে। এতে সাধারণ বৈধ ব্যবসায়ীদেরও অনেক সময় নাজেহাল হতে হয়।

আর এসব ক্যাশিয়ার পদ পেতে হলে লাখ লাখ টাকার লবিং। সেই সঙ্গে রয়েছে জোরালো তদবির। এভাবে কথিত এসব ক্যাশিয়াররা অপরাধ জগত থেকে পুলিশের নামে আদায় করছে কোটি কোটি টাকা। এ টাকার বেশিরভাগই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা সিএমপি’র সংশ্লিষ্ট বিশেষ কর্মকর্তাদের পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরা বৈধ-অবৈধ ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইলিং, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে মাদক ব্যবসা, অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ী, জুয়ার আসর, ফুটপাতের অবৈধ হকার, আবাসিক হোটেলে পতিতা ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লার, জাল টাকার কারবারি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল সেমাই তৈরীর কারখানা ভেজাল গাওয়া ঘি কারখানাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা, সোনা চোরাচালান, কাঠ পাচারকারী হুন্ডি ব্যবসায়ী,  নানা ভেজাল পণ্য, পরিবহন ব্যবসায়ী, পাসপোর্টের দালাল, ট্রেনে মাদক বাণিজ্য,  সহ বিভিন্ন অবৈধ চোরাচালানিদের কাছ থেকে দৈনিক,সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে এ টাকা আদায় করে আসছে। এছাড়া এসব ক্যাশিয়ার টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষকেও পুলিশে ধরিয়ে দেয়া এবং গ্রেফতার হওয়া অপরাধীদের কৌশলে থানা থেকে বের করে আনার কাজও করে থাকে। এরাই অনেক সময় পুলিশের বিশেষ অভিযানের খবর আগেভাগেই অপরাধীদের কানে পৌঁছে দেয়। যে কারণে পুলিশের অধিকাংশ অভিযানই ব্যর্থ হয় বারংবার। আর একারণে মহানগরীতে দিন দিন বেড়ে চলেছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। উল্লেখিত স্বঘোষিত এসব ক্যাশিয়ারদের অনেকে এখন কোটিপতি। তাদের রয়েছে নামে-বেনামে জায়গা-জমি ও বিলাসবহুল বাড়িঘরসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এ ব্যাপারে যখনই পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা উর্ধবতন  কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয় তারা বারংবার শুধু একটি কথাই বলে থাকেন ,”ক্যশিয়ার নামে কোনো পদ নেই। ক্যাশিয়ারের নামে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে থাকে এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে”। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে,একজন মাদক ব্যবসায়ী,অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ী, জুয়ার আসরের জুয়ারী,আবাসিক হোটেলেরর পতিতা ব্যবসায়ী, মহিলা রেখে অবৈধ ম্যাসেজ পার্লার ব্যবসায়ী,জাল টাকার কারবারি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল সেমাই তৈরীর কারবারী,কারখানায় ভেজাল ঘি সহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরীর মালিক,সোনা চোরাচালানী, কাঠ পাচারকারী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, পাসপোর্টের দালাল সহ এসব দু’নম্বর কাজের লোক যারা পুলিশের স্বঘোষিত ক্যাশিয়ারদের দৈনিক,সাপ্তাহিক বা মাসিক হারে টাকা দিয়ে আসছে, তারা পুলিশের ক্যাশিয়ারদের চাঁদার বিনিময়ে তাদের ব্যবসায় কোন ব্যাঘাত না ঘটার নিরাপত্তা পাচ্ছে তারাতো অবশ্যই অপরাধী। তাহলে অভিযোগটা দেবে কে.? আর এদের কারণেই মহানগরিতে অপরাধ কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে।

একটি সূত্রে জানা যায়, সিএমপি হেড কোয়ার্টারে প্রত্যেক মাসে থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে “মাসিক অপরাধ সভা”অনুষ্টিত হয়। সভায় সিএমপি’তে অপরাধীদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের আলোচনার পাশাপাশি কোন সময় কথিত এসব ক্যাশিয়ারদের ব্যাপারে আলোচনা উঠে আসলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা থানা ক্যাশিয়ারের ব্যাপারটি এড়িয়ে তাদেরকে থানায় চা আনার লোক , ইলেক্ট্রিশিয়ান বা ঝাড়ুদার হিসেবে রাখা হয়েছে বলে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে আগে থানা ছিল মোট ৬টি। শহরের আইন-শৃংখলা রক্ষা কল্পে পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে বর্তমানে ১৬ টি থানায় উন্নীত হয়। কিন্তু ১৬ থানায় উন্নীত হলেও এ ধরণের নানা অনিয়মের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর আইন-শৃংখলার তেমন একটা উন্নতি হয়নি বলে বিজ্ঞ মহলের অভিমত। আর এই ১৬টি থানায় বর্তমানে দায়িত্বরত ক্যাশিয়ারের মধ্যে রয়েছে, কোতোয়ালি থানায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল নুর মোহাম্মদ ওরফে নুরু মিয়া,তিনি দীর্ঘ ৮/১০ বছর ধরে কতোয়ালী থানায় আছেন।

বন্দর থানায় অবসরপ্রাপ্ত মিজান,ওরফে লাল মিজান। তিনি প্রায় ২/৩ বছর ধরে আছেন।

ডবংলমুরিং থানায় রয়েছেন পুলিশের সোর্স জাহাঙ্গীর, তিনি প্রায় ১ বছর ধরে আছেন।

পাহাড়তলি থানায় মঞ্জু, প্রকাশ সুইপার মঞ্জু, সে আছে তাও ২/৩ বছর। পাঁচলাইশ থানায় চাকুরিচ্যুত কনষ্টেবল কুদ্দুস ও তার সহযোগী কাঞ্চন দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে আছেন। চান্দগাঁও থানার ক্যাশিয়ার সোর্স জাকির ও তার ছেলে, রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা হতে যে সব পাহাড়ী বাংলা মদ চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশ  করে তা সব জাকিরের গ্রীন সিগন্যাল ও জাকিরের নিয়ন্ত্রণেই প্রবেশ করে। সোর্স জাকির দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে চাঁদগাও থানায় আছে। সদরঘাট থানার ক্যাশিয়ার কনস্টেবল মাইনুদ্দীন, সেও প্রায় ১/২ বছর ধরে আছে। খুলশী থানায় ক্যাশিয়ার মাদক ব্যবসায়ী খ্যাত বড় মিয়া। ৮-১০ বছর ধরে তিনি এ থানায় ক্যাশিয়ারের কাজ করে আসছেন।

হালিশহর থানার ক্যাশিয়ার সোর্স শাহাবুদ্দিন। তিনি একসময় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।তিনিও দীর্ঘ ৩/৪ বছর ধরে আছেন।

ইপিজেড থানার ক্যাশিয়ার সুলতান। সে আছে প্রায়৩/৪ বছর। কর্ণফুলী থানার ক্যাশিয়ার থানা এলাকার সোর্স শফি ও তার ভাগিনা সবুর। শফি কর্ণফুলী থানার জন্মলগ্ন থেকেই কর্ণফুলী থানার ক্যাশিয়ার। পতেঙ্গা থানার ক্যাশিয়ার থানার জনৈক কম্পিউটার অপারেটর বলে জানা গেছে।

আকবর শাহ থানার ক্যাশিয়ার অলি। সে দীর্ঘ ১ বছর ধরে ঐ থানায় আছে।বায়েজিদ বোস্তামী থানায় রয়েছে পুলিশের সোর্স হানিফ। সে দীর্ঘ ২ বছর ধরে বায়েজিদ থানায় আছে। বাকলিয়া থানার ক্যাশিয়ার জনৈক শফি ও জহির। তারা উভয়েই মহানগরীতে ইয়াবা পাচারের সহযোগী এবং নিজেরাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

এ সব ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশানারের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: