ঢাকা,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটায় বিরান বাঁশখালীর বনাঞ্চল ফসলি জমি, নির্বিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ::

বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর বাহারছড়া ও শেখেরখিলে বনের গাছ, পাহাড়ি মাটি ও ফসলি জমির উর্বরা অংশ বিরান হচ্ছে ইটভাটার কারণে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নামমাত্র ছাড়পত্র দেখিয়ে পাহাড়ের কিনারে তৈরি করা হয়েছে ইটভাটা। সন্ধ্যা নামতেই ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে অবাধে প্রবেশ করছে কাঠ বোঝাই ট্রাক। উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ হতে অভিযান না থাকায় ইটভাটার মালিকরা ইচ্ছেমতো পাহাড়ের মাটি ও কাঠ ব্যবহার করছে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের আইনে ইটভাটার স্থান ও ইট উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অভয়ারণ্য এলাকায় ইটভাটা গড়ে তোলা নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সে নিয়মও মানা হয়নি। পাহাড়ের গাছ নিয়মিতভাবে ইটভাটাগুলো প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করে আসলেও ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়ম রয়েছে জিকজ্যাগ কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফট ব্রিজ, হাইব্রিড হফম্যান কিলন পদ্ধতির ইটভাটা তৈরির। কিন্তু ইটভাটার মালিকরা জিকজ্যাগের পরিবর্তে পুকুরিয়া ইউনিয়নের চা-বাগান সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে লম্বা চিমনির মেসার্স চৌধুরী ব্রিক্স নামের ইটভাটা। সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি লটহল পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে ৩টি ইটভাটা। একইভাবে বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা এলাকায় ধানী জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি স্থানে ৩টি ইটভাটা। কৃষি জমির উপরি অংশ, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। নির্ধারিত মাত্রায় কয়লা ব্যবহার করতে হবে। সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা কৃষি জমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। ইটভাটা তৈরির ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।
চাম্বল বনবিট কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, ইটভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো নিষেধ রয়েছে। কাঠ বহনকারী গাছ দেখলেই আটক করা হবে। চাম্বল ও শেখেরখিলে ইটভাটাগুলো ধানি জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে। পরিবেশ বা বন আইনে ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে মামলার বিষয়টি দেখতে হবে।
কালিপুর ইউনিয়নের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা গড়ে তোলা হলে বনবিভাগের কোন আপত্তি নেই। কাঠ ব্যবহার ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। যেসমস্ত ইটভাটার মালিক পাহাড়ি মাটি ব্যবহার করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। ইটভাটাগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে, আইন বহির্ভূত কিছু পাওয়া গেলেই ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা তৈরি হলে কোন বাধা নেই। তবে পাহাড় কর্তন, কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানো হলে তদন্তপূর্বক অভিযোগ সত্যতা পাওয়া আইনের আওতায় আনা হবে। আইন অমান্যে ১০ বছর কারাদ-, ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

পাঠকের মতামত: