ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রভাব ভোগ্যপণ্যে

মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে মোটরযান এক্সেল লোড (ওজনসীমা) নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের অজুহাতে বাড়ছে চাল–ডালসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার। ব্যবসায়ীরা জানান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ গত পহেলা ডিসেম্বর থেকে ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করে। ফলে ব্যবসায়ীরা ছয় চাকার একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যানে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনতে পারছেন না। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে ছয় চাকার গাড়িই বেশি আসে। নতুন আইনে বলা আছে, গাড়ির ওজনসহ সর্বোচ্চ ওজনসীমা ২২ টনের বেশি হতে পারবে না। অন্যদিকে গাড়ি ভাড়া কিন্তু কমেনি, পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে চাল–ডাল, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওজন সীমা নির্ধারণের ফলে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশীয় চালের দাম। ব্যবসায়ীদের মতে, আগে একটি ট্রাকে অনায়াসে ১৫–১৬ টন চাল আনা সম্ভব হতো। কিন্তু নতুন আইনের কারণে ১২–১৩ টনের বেশি পরিবহন করা যাচ্ছে না। কোনো ব্যবসায়ী যদি এখন ২০ টন চাল আনতে চান, তাহলে তাকে বাকি সাতটনের জন্য আরেকটি গাড়ি ভাড়া নিতে হবে। এমনিতেই গাড়ির সংকটের কথা বলে আগেই ভাড়া বাড়িয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এখন ভাড়া না বাড়ালেও নতুন আইনের কারণে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর আড়তদাররা জানান, গত ১০ দিনের মধ্যে দেশীয় চালের মধ্যে জিরাশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ, স্বর্ণা সিদ্ধ ও নাজিরশাইলের বস্তাপ্রতি ২০০–২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে ডাল, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ভোগ্য পণ্যের দাম কেজিতে ২–৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এবিষয়ে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্যাসহ নানা অজুহাতে এতদিন ধরে উত্তরবঙ্গের চাল ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে আমাদের বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হয়েছে। এখন সরকারের বেঁধে দেয়া ওজনসীমার কারণে আমরা বিপদে পড়ে গেছি। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা এ আইনটি স্থগিত করা। এভাবে চলতে থাকলে সামনে পরিবহন খরচ আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা বলে মূলত চট্টগ্রামের ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মহাসড়ক যদি ওজনের চাপে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সরকারের উচিত আধুনিক নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়কের উন্নয়ন করা। চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। বন্দরের সক্ষমতার অভাবে এমনিতেই আমরা সমস্যা আছি। প্রায় সময় পণ্য আমদানিতে প্রচুর সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে বর্তমানে মহাসড়কে ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণের কারণে ছয় চাকার একটি ট্রাকে সর্বোচ্চ ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আমরা আগে গাড়ির ওজন বাদে সর্বোচ্চ ১৮ টন পর্যন্ত পণ্য আনতে পারতাম। এখন বাকি পণ্যের জন্য আলাদা করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে অথবা স্থল বন্দরে গুদাম ভাড়া করে রাখতে হবে। ফলে বাজারে ভোগ্যপণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। একই সমস্যা চট্টগ্রাম বন্দরেও বিদ্যমান। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি গত বছর উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু যান চলাচলের শুরুতে বিভিন্ন স্থানে সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে গেছে। কোথাও উঁচু হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দক। তাই ভারী যানবাহনের চাপ থেকে মহাসড়ককে রক্ষায় মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ আইনটি করা হয়। কারণ কম চাকার গাড়িতে বেশি পণ্য পরিবহন করা হলে সড়কের ওপর বেশি চাপ পড়ে। মোটরযান আইনটি আগেও ছিলো, কিন্তু পরিবহন মালিকরা ৩–৪ টন বেশি পণ্য পরিবহন করে ২ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যেতেন। তাই এবার নির্ধারিত ওজন সীমার অতিরিক্ত প্রতি টনের জন্য ৫ হাজার টাকা করা জরিমানা নিয়ম রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য হাজার কোটি টাকার সড়ক নষ্ট করে ফেলা অযৌক্তিক।

প্রসঙ্গত, ভারী যানবাহনের চাপ থেকে মহাসড়ককে রক্ষায় পহেলা ডিসেম্বর থেকে মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করে সওজ। নতুন আইনে ছয় চাকার যানবাহনে সর্বোচ্চ ওজনসীমা ২২ টন, ১০ চাকার ওজনসীমা ৩০ এবং ১৪ চাকার ওজনসীমা সর্বোচ্চ ৪০ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গাড়ির ওজনসহ যে সীমা নির্ধারণ করেছে এটি অযৌক্তিক। এতে পণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়বে। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে এটির সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর।

পাঠকের মতামত: