ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ যাচ্ছে ইটভাটায়

বিশেষ প্রতিনিধি ::

ইটভাটার চুল্লিতে আগুন দেয়ার চলছে তুমুল প্রস্তুতি। তাই রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক ইটভাটায় চলছে জ্বালানি কাঠ মজুদের মহোৎসব। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কাঠ ঢুকছে উপজেলার শতাধিক ইটভাটায়। জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীচক্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব কাঠ জিপে (চাঁদের গাড়ি) করে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছে। চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক দিয়ে প্রকাশ্যে এ সব কাঠ নেয়া হলেও বনবিভাগ নির্বিকার। চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক, মরিয়মনগর–রাণীর হাট ডিসি সড়ক, ফেরিঘাট চন্দ্রঘোনা সড়ক, শিলক কালিন্দি রাণী সড়ক, পোমরা–বেতাগী আমানুল্লাহ সড়ক, শান্তির হাট–বেতাগী সড়ক, চন্দ্রঘোনা বুইজ্জার দোকান সড়ক, নিশ্চিন্তাপুর সড়ক ও সরফভাটা মীরেরখীল সড়ক দিয়ে চাঁদের গাড়িতে বেপরোয়া গতিতে কাঠ পাচার চলছে। সড়কে উঠলে এসব জ্বালানি কাঠ বহনকারী গাড়ির অস্বাভাবিক গতির কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটছে।

সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের উপজেলার মরিয়মনগর চৌমুহনি দিয়ে মালিকানাধীন একটি জিপে করে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জানতে চাইলে গাড়িচালক আমান জানান, সরফভাটার পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে আনা এসব কাঠ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। একই দিন রাজানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়েও জ্বালানি কাঠ মজুদ করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার এক ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের ইটভাটায় প্রতি মৌসুমে কয়লার বিকল্প হিসেবে জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। কিছুদিন পরে ইটভাটার চুলিহ্মতে আগুন দেয়া হবে। তাই এবার আগে থেকেই চুল্লির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। বেতাগীর এক ইটভাটার মালিক বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদনে আমরা ইটভাটা চালাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী কয়লা না পাওয়ায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার রাণীর হাট, ইসলামপুর, রাজানগর, ঠান্ডাছড়ি, হোসনাবাদ, কোদালা, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা ও বাঙ্গালহালিয়া এলাকার অন্তত শতাধিক ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হয়। তাই ইটভাটার চুল্লিতে আগুন দেয়ার জন্য আগে থেকেই কাঠ মজুদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চন্দ্রঘোনা থেকে রাইখালী ফেরি দিয়ে রাজস্থলী এবং কাপ্তাই পাল্পউড বাগানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের খুরুশিয়া দশ মাইল এলাকা থেকে চন্দ্রঘোনা হয়ে হোসনাবাদ নিশ্চিন্তাপুরের নয়টি ইটভাটায় কাঠ পাচার হয়। এছাড়া রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের রাণীর হাট, ইসলামপুর, কোদালা, পদুয়া, সরফভাটার চিরিঙা ও পোমরার বনাঞ্চল থেকেও অবাধে কাঠ পাচার হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এভাবে প্রতিদিন শতাধিক চাঁদের গাড়ি করে ১৫ লক্ষাধিক টাকার জ্বালানি কাঠ বিভিন্ন ইটভাটায় ঢুকছে। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও ইটভাটাগুলোতে প্রচুর কাঠ পাচার হচ্ছে। আর এতে জড়িত শতাধিক কাঠ ব্যবসায়ী।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাচারকারীরা সিন্ডিকেট করে উপজেলার ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি কাঠ পাচার করছে। ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় ইট তৈরির তিন মাসের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক বনে যাচ্ছেন। এতে করে রাঙ্গুনিয়ার বন উজাড় হয়ে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। ফলে কোন রাখঢাক ছাড়াই প্রকাশ্যে কাঠ পাচার চলছে। এমনটাই অভিযোগ সাধারণ জনগণের।

রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানান, অবৈধ কাঠ পাচার রোধে আমরা সবসময় তৎপর। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করে কাঠ পাচার রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, প্রশাসন কাঠ পাচার রোধে সচেষ্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে কাঠসহ চাঁদের গাড়ি আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: