ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নগরীতে অপহরণকারী চক্রের খপ্পরে চকরিয়ার ৪ ব্যবসায়ী

এম. জাহেদ চৌধুরী চকরিয়া ::

চট্টগ্রাম মহানগরের আন্দরকিল্লাস্থ একটি হোটেল থেকে নাস্তা খেয়ে বের হন ‘র’ আদ্যক্ষরের এক ব্যবসায়ী। এমন সময় দুইজন লোক এসে জিজ্ঞেস করলেন আপনার বাড়ি কি চকরিয়ায়? তিনি উত্তর দিলেন ‘হ্যাঁ’। তখন ওই দুই লোক তাকে তার এক আত্মীয় ডেকেছেন বললে তিনি একটু এগিয়ে যান। সাথে সাথে তাকে কালো গ্লাস লাগানো একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন চক্রটি। গাড়িটি ওই স্থান ত্যাগ করে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় কালো কাপড় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দু’চোখ বেঁধে দেয়া হয়। এসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। পরে গাড়িতেই তার শার্ট–প্যান্ট খুলে উলঙ্গ করা হয়। এসময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গাড়িতে থাকা এক সুন্দরী রমনীর সাথে ছবি তুলতে বাধ্য করে। পরে ওই রমনীর সাথে অশ্লীলভাবে ছবি তুলে নেন চক্রটি। পরে ছবিগুলো দেখিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। নচেৎ ওই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এতে সম্মান খোয়ানোর ভয়ে আত্মীয়দের মুঠোফোনে অনুরোধ করে বিকাশে ৫০ হাজার ও নগদ আনা ৫০ হাজার টাকাসহ

মোট ১ লাখ টাকা দিয়ে ওইদিন রাত ১২টার দিকে ছাড়া পান ওই ব্যবসায়ী। গত ১ ডিসেম্বর রাত ৮টায় ঘটে এ ঘটনা। গতকাল ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার প্রতারণার শিকার ওই ব্যবসায়ীর আত্মীয়রা ঘটনাটির বর্ণনা দেন।
এইগুলো কোন সিনেমার গল্প নয়। বাস্তব কাহিনী। চট্টগ্রামে চিকিৎসা করতে গিয়ে এধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার ব্যবসায়ী। গত ৪ অক্টোবর একই ধরনের ঘটনার শিকার হন চকরিয়ার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমি চকরিয়ায় জুয়েলারী ব্যবসা করি। শরীরের চিকিৎসার জন্য গত ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যাই। চিকিৎসা শেষে বের হওয়ার পর দুইজন যুবক এসে আমার বাড়ি চকরিয়ায় কিনা জিজ্ঞেস করে। চকরিয়ায় বাড়ি বললে গাড়িতে তার এক আত্মীয় ডাকছেন বলে একটি গাড়িতে তুলে নেয়। পরে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে গাড়িতে থাকা এক মহিলার সাথে অশ্লীলভাবে ছবি তুলতে বাধ্য করে। ছবি ক্যামরাবন্দী করার পর মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়। পকেটে থাকা ১১ হাজার ও আত্মীয় কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে নেয়া ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ওইদিন রাতে ছাড়া পাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই–তিন সদস্যের পৃথক প্রতারক ও অপহরণকারী চক্র চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতাল–ক্লিনিক ও আবাসিক হোটেলের আশপাশে অবস্থান করে। তারা নিজেদের সাথে আধুনিক গাড়িসহ রুপসী যুবতীও রাখে। কলাকৌশলে গ্রামীণ উপজেলা থেকে চিকিৎসা বা সওদা করতে যাওয়া লোকজনকে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জিম্মি করে যুবতীর সাথে নগ্ন ছবি ক্যামরা বন্দির পর হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এভাবে গত পক্ষকালের মধ্যেই চকরিয়ার চার ব্যবসায়ী পাঁচ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে।
এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটলেও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করছেন না। ফলে ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধী চক্রটি। জানা গেছে, ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণকারী চক্রটি তাদের কাজ সেরে নেয়। টাকা আদায় হলেই অপহৃতকে অন্ধকার একটি জায়গায় চোখ বন্ধ অবস্থায় রেখে চলে যায়। যাতে ধরাছোয়ার বাইরে থাকে সেজন্য তারা নিজেদের ফোন ব্যবহার না করে অপহৃতের ফোন থেকে জিম্মি লোকের আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়া কোন ব্যক্তি ঘটনার ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেননি। যদি লিখিত বা মৌখিকভাবে থানাকে জানাতেন তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীরা অবহিত না করায় ঘটনাটি আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশি টহল জোরদারের পাশাপাশি অপরাধী চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করবো।

পাঠকের মতামত: