ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আইনজীবী হত্যা : উত্তাল আদালত প্রাঙ্গণ

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পি হত্যার ঘটনায় উত্তাল হল চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ। এ নিয়ে গতকাল রোববার দু’ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। এ সময়ের মধ্যে আদালতে কোনো বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ সোমবার আইনজীবীরা আদালতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। এদিকে দুপুর আড়াইটায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের নীচে বড় জানাজা ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পির হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান আইনজীবী নেতারা। অন্যথায় আরো বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথাও বলেন তারা।

এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গতকাল সকাল থেকেই আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। গ্রুপে গ্রুপে দাঁড়িয়ে তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ওমর ফারুক বাপ্পীর সহকর্মীরা আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে তারা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। একইসাথে এ সময়ের মধ্যে আদালতের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। দুপুর দেড়টার দিকে আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশেও করেন। পরে আইনজীবীরা সোমবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ডাক দেন এবং এই দিন তারা আদালতের কোনও কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে জানান। এসময় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বার কাউন্সিলের সদস্য ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মুজিবুল হক চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি রতন রায় ও সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রিয় সদস্য দুদকের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, আমরা ওমর ফারুক বাপ্পি হত্যার বিচার চাই। তাকে যে বা যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। বাপ্পির খুনীদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত না করলে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা কোনও মামলা পরিচালনা করবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

পরে তিনি বাপ্পির খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি, কালো ব্যাচ ধারণ ও বেলা ১১টায় কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। সমাবেশ শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে নিহত ওমর ফারুক বাপ্পির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম কোর্টের সব আইনজীবী অংশ নেন। জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে নগরীর চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডের একটি তিন তলা ভবন থেকে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় তরুণ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পির মৃতদেহ উদ্ধার করে চকবাজার থানা পুলিশ। ওই বাসাটি গত মঙ্গলবার এক নারী তার স্বামীসহ থাকবেন বলে ভাড়া নিয়েছিলেন। ভাড়া নেয়ার সময় তার স্বামী আইনজীবী বলেও বাড়ির জমিদারকে তথ্য দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে থাকার কথা থাকলেও বাসাটি ফাঁকা থাকায় গত বুধবার থেকেই ওই বাসায় থাকা শুরু করেন ওই নারী। শুক্রবার রাতে ওই বাসায় থাকতে যান নিহত বাপ্পিও। পুলিশ ধারণা করছে রাশেদা বেগম নামে এক নারী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় নিহত আইনজীবীর বাবা আলী আহমদ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই রাশেদাকে গ্রেফতার করার গুজব ছড়ায় আদালত প্রাঙ্গণে। বাপ্পীর হত্যার পর জানাজা পর্যন্ত সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালনকারী আইনজীবী দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে একাধিক দুষ্কৃতকারী জড়িত থাকতে পারে। পরিকল্পনা করে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় বাপ্পীকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। অবলম্বে এ হত্যার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

পাঠকের মতামত: