ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সাতকানিয়ায় দুই মেম্বার সমর্থকে গুলি, আহত ৮

SAT-সাতকানিয়া সংবাদদাতা :::      সাতকানিয়ায় খাগরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিজিত পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ে গুলিবিদ্ধ, দায়ের কোপ লোহার রডের আঘাতে ৮জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একবৃদ্ধা কলেজ ছাত্রী সহ মহিলা ৪জন পুরুষ রয়েছে। আহত পুরুষদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২জনকে চমেক হাসপাতাল অন্য ১জনকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ১টি দোকান ১১টি বসতঘরে ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার পৌঁনে ১টার দিকে খাগরিয়া নুরু মার্কেট সংলগ্ন তৈয়ার পাড়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। বর্তমানে নুরু মার্কেট এলাকায় পুলিশ অবস্থানে থাকায় উভয় পক্ষের লোকজন পলাতক রয়েছে। তবে এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা খাগরিয়া ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ড এলাকার বর্তমান নির্বাচিত মেম্বার লিয়াকত আলী তার প্রতিদ্বন্দ্বী একই ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বার পদপ্রার্থী আবদুস সালামের সাথে নির্বাচনে জয়পরাজয়ের বিষয়কে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন লোক আহত হয়েছে। পূর্ব ঘটনার জের ধরে গতকাল রবিবার পৌঁনে ১টার দিকে প্রথমে পরাজিত মেম্বার পদপ্রার্থী আবদুস সালামের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বর্তমান মেম্বার লিয়াকত আলীর লোকজনের উপর হামলা চালায়। পরে আবদুস সালামের লোকজনদের মোকাবেলা করতে গিয়ে লিয়াকত আলীর লোকজনও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে অনেক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের মহিলা পুরুষসহ ৮জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, খাগরিয়ার তৈয়ার পাড়া এলাকার মো. জসিম উদ্দীন (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩০), মো. আরফান (১৯) মো. সাকিব (১৮) তাদের প্রথমে দোহাজারী হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এদের মধ্যে জসিম, জাহাঙ্গীর আরফানকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে জসিমের অবস্থা আশংকাজনক। অপরদিকে আহত মো. সাকিবকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উভয় পক্ষই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এব্যাপারে দোহাজারী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শেখ সাদী বলেন, আহতরা শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। এদের মধ্যে জসিমের অবস্থা আশংকাজনক। জসিমসহ ৩জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
মহিলাদের মধ্যে মাথায় আঘাত পেয়ে মোহছেনা খাতুন (৮০), লোহার রডের আঘাতে ডান হাতে আঘাত পেয়ে শারমিন আক্তার (২৭), লোহার রডের পিটুনীতে শাহিদা আক্তার (২৫) চন্দনাইশ আমানত ছফা বদরুন্নেছা মহিলা কলেজের ¯œাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী আনুসা ছিদ্দিক তাসনিম (১৮) বাম হাতে দায়ের কোপে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে উভয় পক্ষে ১টি দোকান ১১টি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে। ভাংচুরকৃত মো. বেলাল হোসেনের মুদির দোকান, মো. নাজিম উদ্দীন, মো. ফারুক, মো. নাছির, মো. হেলাল, মো. জয়নাল, দিল মোহাম্মদ, মো. বেলাল, আবদুল বারেক, সৈয়দ মিয়া, আবু তাহের মিয়াজি কবির আহমদের বসতঘর ভাংচুর লুটপাট করা হয়েছে। এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে তৈয়ার পাড়া এলাকার ৬৫বছরের বৃদ্ধা মহিলা আলমাছ খাতুন বলেন, একজন পরাজিত আরেকজন বিজয়ী দুইজনের জন্য আমাদের এলাকার মানুষ অশান্তিতে রয়েছে। আজ (রবিবার) উভয় পক্ষের লোকজন মারামারি করলে অনেকজন গুলিবিদ্ধ হয়। অনেক বসতঘরও ভাংচুর করা হয়। এখানে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আবদুস সালামের লোকজন প্রথমে মারামারি শুরু করে।
ব্যাপারে বর্তমান মেম্বার মো. লিয়াকত আলী বলেন, আবদু সালাম মেম্বার নুরুল আলমের নেতৃত্বে পৌঁনে ১টার দিকে তৈয়ার পাড়া এলাকায় আমার সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট এবং ১টি দোকান ভাংচুর করা হয়েছে। সৈয়দ মিয়ার বাড়ি থেকে ৭৪হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। আবদুস সালাম মেম্বার নির্বাচিত হতে না পারায় আমার সমর্থকদের উপর বিভিন্ন সময় ধমক হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে অনেকদিন ধরে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার আমার লোকদের উপর হামলা করে অনেকজনকে আহত করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের দলের গুলি তারা খেয়ে আমি আমার লোকদের উপর দোষ চাপাচ্ছে। অপরদিকে পরাজিত মেম্বার পদপ্রার্থী আবদুস সালাম বলেন, তৈয়ার পাড়ার বেলাল, গরু বেপারী জাফর জিয়াবুলের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এখানে আমার লোকজনকেও মেরে আহত করা হয়েছে। আমি ঘটনার সময় চট্টগ্রাম শহরে ছিলাম। পুলিশ আমাকে ফোন করলে বিস্তারিত বলেছি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা করেনি। মামলা করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে

পাঠকের মতামত: