ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সপরিবারে চুরিই যাদের পেশা

950b6e67fbbeb0f711721ef6b30667d9চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

বেশ সৌখিন মানুষ তিনি। পরিবার নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। কিছুদিন পর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে যান স্ত্রী পুত্র পরিজন নিয়ে উঠেন দামী হোটেলে। আপাত দৃষ্টিতে তাদের ভ্রমণপিপাসু বলে মনে হলেও এ পরিবারের সদস্যদের পেশা অভিজাত ফ্ল্যাটে ঢুকে চুরি করা। চুরি করতে গিয়ে নিজেকে কখনও মেজর, কখনও সিআইডি অফিসার, কখনও পুলিশ ইন্সপেক্টর পরিচয় দেন শফিকুল ইসলাম। কেউ যাতে সন্দেহ না করে, সেজন্য তার ছোট সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে উঠতেন। চুরির জিনিসপত্র তারা সঙ্গে না রেখে বিক্রি করে টাকা ব্যাংকে রেখে দিতেন। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মীর্জা সায়েম মাহমুদের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ টীম গত রোববার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নগরীর প্যারামাউন্ট ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শফিকুল ইসলাম ওরফে স্বপন বেপারি, তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার কেয়া (২৭) এবং সেলিনার ভাইয়ের বৌ নুপূর আক্তার? (১৯)। তাদের কাছে দুটি ল্যাপটপ, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, একটি স্বর্ণের চেইন ও ৪০০ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।

উপ-কমিশনার মীর্জা সায়েম মাহমুদ জানান, ‘সেলিনা, তার স্বামী, মা, ভাই, বোন, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই চুরির সঙ্গে জড়িত। নুপূরের স্বামীও চুরির মামলায় বরিশাল কারাগারে আছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা সায়েম। গ্রেফতার অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোববার রাতে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে চোরই ল্যাপটপ বিক্রি করতে গিয়ে স্বপন ধরা পড়েন। তার কাছে পাওয়া তথ্যে প্যারামাউন্ট হোটেল থেকে তার স্ত্রী ও শ্যালকের বৌ নুপূরকে গ্রেফতার করা হয়।’

মীর্জা সায়েম আরো বলেন, ‘২০০০ সালে তিনি বিদেশে গিয়ে সাত বছর পর ফিরে আসেন। সে সময় নিজেকে র‌্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতে গিয়ে কালকিনিতে গ্রেফতার হন। পরে ঢাকায় ফিরে সেলিনাকে বিয়ে করেন।’ স্বপন পুলিশকে আরো জানিয়েছে, ‘তারা পরিবারের সদস্যরা মিলে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আবাসিক হোটেলে উঠে বাসা টার্গেট করেন। সেখানে সেলিনা ও নুপূর গিয়ে কৌশলে চুরি করেন।

গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘আত্মীয় ও পরিচিতদের দোহাই দিয়ে তারা মানুষের বাড়িতে গিয়ে মূল্যবান মালামাল চুরি করে পালিয়ে আসেন। তারা আগেও চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি তারা চট্টগ্রামে এসে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়ে হালিশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায় দুটি বাসায় চুরি করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেলিনা নিজেকে অন্তঃস্বত্ত্বা দেখিয়ে প্রতারণা করে গত ৩ জুলাই আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান। সেখান থেকে ৭ জুলাই খুলনায় গিয়ে চুরি করে ঢাকায় চলে আসেন। গত ১৮ জুলাই আবার বরিশাল গিয়ে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন এবং তার স্বামীসহ সেখানেও একটি চুরি করেন। এছাড়া ২১ জুলাই রাজশাহী, ২৪ জুলাই পাবনা গিয়ে কয়েকটি চুরি করে সেখান থেকে ২৫ জুলাই চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানেও দুটি বাসায় চুরি করেন।’

গতকাল নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে স্বপন বলেন, ‘তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় চুরি করেন তারা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে যে জেলায় যান, সেখানে দামি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা।’

সেলিনা জানান, গত এপ্রিল মাসে বরিশালে তিনি ও তার ভাই মাঈনুদ্দীন মোহন একটি চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার স্বামী স্বপনসহ আরও কয়েকজনকে তখন গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে খুলনা, রাজশাহী, পাবনায় গিয়ে বেশ কয়েকটি চুরির কথা স্বীকার করেন সেলিনা। সঙ্গে তার স্বামী স্বপনও ছিলেন। এ পেশায় তার ভাই মাঈনউদ্দিন মোহন, স্বামী স্বপন, মোহনের স্ত্রী নুপূর আক্তার, ছোট বোন শাবনুর আক্তার ও মা মমতাজ বেগমসহ পরিবারের অন্যরা মিলে চুরির কাজ করেন বলেও জানান সেলিনা।

পাঠকের মতামত: