ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কে হচ্ছেন হেফাজত আমির

অনলাইন ডেস্ক :
আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ধারণ নিয়ে চলছে ¯œায়ুযুদ্ধ। বর্তমান আমির শাহ আহমদ শফী বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সংগঠনের হাল ধরতে আগ্রহী আছেন অনেকে। মজলিশে শূরার একটি অংশ তার ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্ব চায়। অপর অংশের পছন্দ বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। আলোচনায় আছেন সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মুফতি নুর আহমদও। এ দুজনও অনেকের পছন্দে রয়েছেন। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত সংগঠনটির মজলিশে শূরার বৈঠকে এই চাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে। পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রথমবারের মতো শফীর সহকারি ঠিক করা হয়েছে। নতুন করে শিক্ষা সচিব ও সহকারী শিক্ষা সচিবের দায়িত্বও বণ্টন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শাহ আহমদ শফী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় বিকল্প নেতৃত্ব চূড়ান্ত করে রাখতেই হঠাৎ হয়েছে মজলিশে শূরার এই বৈঠক। হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দায়িত্ব বণ্টন করে হেফাজতের পরবর্তী নেতৃত্বও ঠিক করে দিয়েছেন শাহ আহমদ শফী।
মজলিশে শূরার সদস্য মাহমুদুল হাসান বলেন, বড় হুজুর শফী অসুস্থ হওয়ায় মাদ্রাসা পরিচালনার কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে। প্রথমবারের মতো সহকারী পরিচালকের পদ ঘোষণা করা হয়েছে। মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন মুফতি নুর আহমদ। আর সহকারী শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন আনাস মাদানী।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, বর্তমান আমির যতদিন আছেন ততদিন কেউ তার স্থলাভিষিক্ত হবেন না। তবে তাকে সহযোগিতা করতে প্রথমবারের মতো সহকারী পরিচালকের পদ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন তার ছেলেও। তারা মাদ্রাসা পরিচালনায় নীতিনির্ধারণী ভূমিকা রাখবেন। তবে সংগঠন পরিচালনায় বড় হুজুরের পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন জুনায়েদ বাবুনগরী ও মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ইতিপূর্বে বলেছিলেন, শাহ আহমদ শফী যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ পদ নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমির পদ নিয়ে একাধিক ব্যক্তির আগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনে উত্তরাধিকার সূত্রে আমির হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষা, বয়স, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে আমির নির্ধারণ করবেন মজলিশে শূরার সদস্যরা।
জানা যায়, শাহ আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসারও পরিচালক। তিনি বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তার বিকল্প নিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তৎপরতা ছিল। শফীর অবর্তমানে কে সংগঠন ও মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণে নীতিনির্ধারণী বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এতদিন তা দমিয়ে রাখা গেলেও শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসতে হয় শূরা কমিটিকে। ২১ সদস্যের এই কমিটির মতামতের আলোকেই গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেয় হেফাজত।একটি সূত্র জানায়, শফীর সহকারী হিসেবে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় নেতৃত্ব দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। কারণ এতদিন হেফাজতের মহাসচিব পদে থাকলেও মাদ্রাসা পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না তিনি। আনাস মাদানীও এগিয়ে এসেছেন অনেকখানি। আগে হেফাজতের নির্বাহী কমিটিতে থাকলেও মাদ্রাসা পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনিও ছিলেন না। শিক্ষা সচিব হিসেবে নুর আহমদকে রাখা হলেও মূলত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম এখন আনাস মাদানীই পরিচালনা করবেন। কারণ নুর আহমদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। হেফাজতে তার সাংগঠনিক কোনো পদ নেই। এ ছাড়া ফটিকছড়ির জামেয়া ইসলামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সারাদেশে রয়েছে অসংখ্য ভক্ত। বয়স, পদ ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় তিনি নেতৃত্বের দাবিদার।
শাপলা চত্বর ও নির্বাচন ইস্যু নিয়ে কয়েক বছর ধরেই হেফাজতের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি কাজ করছে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়েও আছে বিভক্তি। হেফাজতের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে সখ্য গড়ার পক্ষে। এ অংশ সরকারবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে হেফাজতের পক্ষ হয়ে তৎপরতা চালায়। তবে হেফাজতের আরেকটি অংশের সখ্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে। ওই পক্ষ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি আদায় করেছে।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হঠাৎ করেই উদ্ভব হয় হেফাজতে ইসলামের। তখন থেকেই এ সংগঠনটির আমির পদে আছেন শাহ আহমদ শফী।

পাঠকের মতামত: