ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি ।। সাতকানিয়ায় শঙ্খের ভাঙনে অর্ধ শতাধিক বসতঘর বিলীন

সাতকানিয়া প্রতিনিধি :satk

গত কয়েক দিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে কেরানীহাটবান্দরবান সড়কের সাতকানিয়া অংশের বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকায়। এছাড়া সাতকানিয়াবাঁশখালী সড়কের আনুফকিরের দোকান এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে সড়ক। শঙ্খ নদীর স্রোতের তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক বসতঘর। বাজালিয়া এলাকায় ভেঙে গেছে শঙ্খের বাঁধ। এখানো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও শঙ্খনদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। বিশেষ করে বাজালিয়া, কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, আমিলাইষ, চরতি, ঢেমশা ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকার কিছু কিছু বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে অনেক পরিবারে রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। শঙ্খনদীর পানি কূল উপড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শঙ্খের ভাঙনে নলুয়া, আমিলাইষ ও চরতি এলাকায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বসত ঘর নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে।

বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত জানান, বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকায় কেরানীহাটবান্দরবান সড়কের উপর দিয়ে কয়েক ফুট উঁচু হয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূর্ব বাজালিয়া, পশ্চিম বাজালিয়া, মাহালিয়া ও বড়দুয়ারা এলাকায় প্রায় ১ হাজার পরিবার বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া শঙ্খের বাঁধ ভেঙে গিয়ে পূর্ব বাজালিয়ার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখানকার অনেক ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান তছলিমা আকতার জানান, পুরো ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ভাসছে। এসব এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে ডুবে গেছে। অনেক বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় খাবার তৈরি নিয়ে মহা সংকটে পড়েছে। শঙ্খনদীর ভাঙনে মধ্যম নলুয়া, নবীর পাড়া ও মতিয়ার কূল এলাকার ১৫টি বসত ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙনের মুখে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের লোকজনকে নিরাপদে নিয়ে আসা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমিলাইষ ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, শঙ্খ নদীর ভাঙ্গনে পশ্চিম আমিলাইষ ও মধ্যম আমিলাইষ এলাকায় ২৫টি বসত ঘর হারিয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো অর্ধ শতাধিক বসত ঘর। এসব ঘরও যেকোন মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, এলাকার অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। কিছু ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব পরিবার গুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘মোরার’ আঘাতে পৌর এলাকার কিছু বসত ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছিল। সে বিধ্বস্ত ঘর গুলো মেরামত করার আগে অবিরাম বর্ষণের ফলে আরো বেশি তিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পৌর এলাকার কোন মানুষ পানিবন্দি নেই।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কেরানীহাটবান্দরবান সড়ক। সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় কেরানীহাটবান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচাল বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো জানান, শঙ্খনদীর ভাঙনে আমিলাইষ, নলুয়া ও চরতি এলাকার কিছু বসত ঘর নদীতে হারিয়ে গেছে। বসত ঘর হারানো এসব মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: