ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার বিএনপি নেতা ওয়াসিমকে রক্ষা করছে আ’লীগ নেতা জাফর!

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
পেকুয়া উপজেলার মগনামার ওয়াসিম বাহিনীর দুই দফা গুলিতে অন্তত ১৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁর বাহিনীর লোকজন চারটি দোকান ও চারটি বসতবাড়িতে হামলা করেছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো মগনামায়। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা ও গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে মগনামার ফুলতলা স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যরা পেকুয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বেপরোয়া হয়ে উঠেন। নির্বাচিত হওয়ার পরপরই গড়ে তুলেন দাগী ও চিহ্নিত আসামিদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সন্ত্রাসীবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন একাধিক মামলার পলাতক আসামি আলী আকবর ওরফে বাদল, জয়নাল আবেদিন ওরফে জয়নাইল্যা ডাকাত, মো. ইউনুছ ওরফে গুরাইয়া ডাকাত, আবু ছৈয়দ, সোনাইয়্যা ডাকাত, আহমদ কবির ওরফে রদক, নাজু, আনছার ও কলিম উল্লাহ। এ বাহিনীর নেতৃত্বে চলছে জায়গা দখল, মারধর ও চাঁদাবাজি। এসব বিষয়ে কেউ থানা প্রশাসনের আশ্রয় নিলে ওসিকে ম্যানেজ করেন চেয়ারম্যান ওয়াসিম। একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে ওয়াসিমের বিরুদ্ধে। প্রথম থেকেই এসব অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করে আসছেন মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম বাবুল। এতে তাঁর প্রতি ক্ষিপ্ত হন ওয়াসিম। বাবুলকে ঠেকাতে তাঁর বাহিনীর সদস্যদের লেলিয়ে দেন। একপর্যায়ে বাবুলের সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু করে। বাবুলকে ফুলতলা স্টেশনে যেতে নিষেধ করে। গেলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন ওয়াসিমের সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই স্টেশনে ওয়াসিমের ক্যাডাররা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বসে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলতলা স্টেশনের অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী বলেন, গত শনিবার রাতে বাবুলের এক সমর্থককে ফুলতলা স্টেশনে ধরে মারধর করেন ওয়াসিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন তাকে ছাড়িয়ে নিতে বাবুলের সমর্থকেরা ফুলতলা স্টেশনে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে ওয়াসিমের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে অন্তত ৭০-৮০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে বাবুলের সমর্থকেরা পিঁছু হটলে তাঁর সমর্থকদের দোকান ও বসতঘরে হামলা-ভাংচুর শুরু করে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এসময় চারটি দোকান ও তিনটি বসতঘর ভাংচুর করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অন্তত ১৪ জন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পেকুয়ার ইউএনও মো. মাহবুবউল করিম। তিনি ফুলতলা স্টেশনে বাবুলকে ডেকে নিয়ে কথা বলছিলেন। ওয়াসিমের সন্ত্রাসীবাহিনীর সদস্যরা বাবুলের বাড়ির পেছনে বহদ্দারপাড়া ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এতে আবারও চারজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই সময় ইউএনও ও পুলিশের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি করলেও প্রশাসনের লোকজন ছিলেন নিরব ও নির্বিকার। ওই সময় বাবুলের সমর্থক জানে আলম নামের এক ব্যক্তির বসতঘর ভাংচুর করা হয়।
আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, মগনামার ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত গুটিকয়েক আওয়ামীলীগের নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকেন। ওয়াসিম কোনো অপকর্ম করলেই তাঁর পক্ষ হয়ে থানায় ফোন করেন এসব নেতারা। বিশেষ করে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম। জাফর আলমের অনুকম্পা নিয়ে ওয়াসিম বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ২ জুন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম ঘুর্ণিঝড় দুর্গতদের দেখতে ও ত্রাণ বিতরণ করতে গেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম ওই টিমকে ওয়াসিমের কাছে নিয়ে যান। পরে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে বিএনপি নেতা ওয়াসিমের সভাপতিত্বে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। বিশেষ অতিথি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম। জাফরের এমন ভুমিকায় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ কারণে অনেক নেতা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে যাননি। ওইদিনের পর থেকে ওয়াসিম এলাকায় প্রচার করেন, মগনামায় যাঁরা আওয়ামীলীগ করেন, তাঁরা তো ছোট নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এখন থেকে আওয়ামীলীগ মেরেই মাইর শুরু হবে। এভাবে হুংকার দেওয়ার ১২ ঘন্টা পার না হতেই ওয়াসিম বাহিনীর লোকজন আওয়ামীলীগের নেতা বাবুলের সমর্থকদের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে।
জানতে চাইলে আনোয়ারুল আজিম বাবুল বলেন, আওয়ামীলীগের গুটি কয়েক নেতা ওয়াসিমকে লালন পালন করছে। টাকা খেয়ে তাঁর পক্ষ হয়ে প্রশাসনকে ফোন করছে। আওয়ামীলীগ নিধনে ওয়াসিমের যে মিশন, সেখানে অনেক আওয়ামীলীগের নেতার ইন্ধন রয়েছে। একারণে সে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের তোয়াক্কা করছে না।
এব্যাপারে জানতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মগনামার ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, এখন থেকে ওয়াসিম হোক, আর যে হোক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ওয়াসিমকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমকে গতকাল রাত ১০.৩২ মিনিটে ফোন দেয়া হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। তথ্য সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: