ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়া ভার্সিটি ভুয়া ডিগ্রি চেয়ারম্যান কারাগারে

মোস্তফা মোহাম্মদ এমরান :::Asraful-800x460

সুইজারল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাস উল্লেখ করে চট্টগ্রামে শিক্ষার নামে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন একব্যক্তি। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় নাম কিংস্টোন ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন কাগজপত্র ও বিজ্ঞাপনে। চট্টগ্রাম মহানগরীর সুগন্ধ্যার একটি বাড়িতে একটি ক্যাম্পাস ও মিমি রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার জাফর ভিলায় স্থায়ী ক্যাম্পাস উল্লেখ করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঢাকা ও কক্সবাজারে এডমিশন অফিস। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। বিজ্ঞাপনে শুধু বিবিএ, এমবিএ নয়, ২ বছরের পিএইচডি ডিগ্রিরও অফার রয়েছে। পিএইচএইচডির জন্য খরচ পড়ে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ৩ বছরের বিবিএ প্রোগ্রামের জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ছাড়াও ৩০ হাজার টাকা ভর্তি ফি। এছাড়া রয়েছে এক থেকে তিন বছর মেয়াদী বিভিন কোর্স। সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা এক ছাত্রের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ধরা পড়ে বিষয়টি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান পরিচয়দানকারী ড. মো. আশরাফুল ইসলাম সজীব এক ছাত্রের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে এক ছাত্রকে নোটিস দিলেই বিষয়টি ধরা পড়ে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভুঁইয়া ও সিনিয়র সহকারী সচিব (লিগ্যাল) মৌলি আজাদ স্বাক্ষরিত ২৬ এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, সুইজারল্যান্ড যার স্থানীয় নাম কিংস্টোন ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রের দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন চৌধুরী’র আদালত অভিযুক্ত ড. আশরাফুল ইসলাম সজীবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি ওইদিন আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান।
জানতে চাইলে বাদিপক্ষের আইনজীবী সুসেন কান্তি দাশ পূর্বকোণকে বলেন, আসামিকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন।
নগরীর সুগন্ধ্যা আবাসিক এলাকার ভুক্তভোগী মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া গত বছর ২১ এপ্রিল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি সুইজারল্যান্ডের ডিগ্রি পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিংস্টোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি বিবিএ সম্পন্ন করার পর বাদিকে আশরাফ স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট দেন। ওই সার্টিফিকেটে আশরাফ বিশ্ববিদ্যালয়টি চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাক্ষর করেন। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারো স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্ত এ ব্যাপারে কোন উত্তর দেননি। বাদিকে উল্টো ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি দেন। এরপর গত বছর ১৪ মার্চ ২ লাখ টাকা বকেয়া থাকার কথা উল্লেখ করে ৫ দিনের মধ্যে তা পরিশোধের জন্য মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়াকে নোটিস দেন। এরপর নোটিসের উত্তর দেয়ার পর মোসলেহ উদ্দিনও তার সার্টিফিকেট দাবি করে আশরাফকে লিগ্যাল নোটিস দেন। এরপর সিএমএম আদালতে আশরাফের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬,৪২৬,৪২২ ও ৫০৬ ধারার অভিযোগে মামলাটি করেন। এরপর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার এস.আই মো. হাছান আলী চলতি বছর ২ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে প্রতারণার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আসামি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আসামি কিংস্টোন ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ারম্যান পরিচয়ে বহু শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করেছে।
অপরদিকে, বাদির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম মাসুদ পারভেজ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনেও এ নামে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য কিংস্টোন বিশ্ববিদ্যালয়ের হটলাইন ও অন্যান্যা ফোন নম্বরে বারবার ফোন করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। অপরদিকে হটলাইনের ০১৯৭৫২১৫৮৫১ নম্বরে কয়েকবার রিং হওয়ার পর সংযোগ কেটে দিয়েছেন। পূর্বকোণ

পাঠকের মতামত: