ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পিডিবি কর্মকর্তাদের তুলোধুনো করলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

pdbচট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ সাব স্টেশন গুলোর পরিবেশ এবং গ্রাহক সেবার মান না বাড়ায় পিডিবির কর্মকর্তাদের তুলোধুনো করলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গ্রাহকরা সাব স্টেশনগুলোতে ফোন দিলেও প্রকৌশলীরা ফোন ধরেন না উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রাহক ফোন দিলে ধরে পিয়নরা। গ্রাহক যদি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কিংবা কর্মকর্তা কোথায় জিজ্ঞেস করেনপিয়ন বলেন, আছেন। কিন্তু তবুও ওই কেন্দ্রের প্রকৌশলী ফোন ধরেন না। বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পিডিবি কর্মকর্তাদের উপর চরম ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘যাদের টাকা থেকে আপনারা বেতন পান তাদের সঙ্গেই আপনাদের এমন আচরণ।’নিজেরা এয়ারকন্ডিশনে বসে বাতাস খাবেনজনগনের খবর রাখবেন না, সাব স্টেশন গুলোর পরিবেশ ঠিক রাখবেন না, সেটা তো হবে না।’

গতকাল শুক্রবার সকালে আগ্রাবাদস্থ বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পাদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ওপর এই ভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি পিডিবির ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আসার পর কয়েকটি সাবস্টেশন দেখেছি। সব গুলো জঙ্গল বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার। আমি জানি-‘ভালো ছাত্ররাইতো ইঞ্জিনিয়ার হয়, এটা কি ভালো ছাত্রের নমুনা ? কিন্তু চাকরিতে আসার পর তাদের এই অবস্থা?

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সবার সামনে বলেন, ‘ বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন হোক সেটা আপনারা (পিডিবির সংশিষ্ট প্রকৌশলী) চান না।’ লাভলোকসান দেখার দায়িত্ব পিডিবির নয়। সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন করতে হবে।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘সাবস্টেশনে কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম থাকতে হবে। একটা প্রজক্টে যারা কাজ করছে; কে ইঞ্জিনিয়ার, কে সহকারী, কে শ্রমিক কিছু বোঝার উপায় নেই। আমি জাপান, সুইডেনসহ অনেক দেশের পাওয়ার স্টেশন ঘুরে দেখেছি। কোথাও এমন চিত্র দেখিনি। ওই সব দেশে সবার আলাদা আলাদা ড্রেস আছে, ড্রেসকোড থেকে বোঝা যায়, কে কোন পর্যায়ের লোক।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কি এত গরিব হয়ে গেছে যে, ড্রেসের ব্যবস্থা করতে পারবে না। পাওয়ার স্টেশনগুলোতে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নিজেরা এসি’র বাতাস খাবেন, আর পরিবেশ ঠিক রাখবেন না। সেটা হতে পারে না।’

আগামীবার আসলে এই হলে মিটিং না করে সরাসরি সাব ষ্টেশন গুলোতে গিয়ে পরিবেশ এবং কার্যক্রম দেখবেন বলে কর্মকর্তাদের সর্তক করেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে সাব স্টেশন গুলোর পরিবেশপরিস্থিতি ঠিক হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য লোক পাঠিয়ে ছবি তুলে নেওয়ারও কথাও বলেন তিনি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু সাংঘাতিক জিনিস! আগামী মাসে আমি আবার আসব। আগে আমার লোক দিয়ে ছবি তুলিয়ে নেব, যাতে প্রিপহ্ম্যানড করে পরিপাটি থাকলেও আপনাদের ত্রুটি ধরা যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নিতে দেশের বাইরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হলে তারা সেটার অপব্যবহার করেন বলেও তিরস্কার করেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের অনেক স্থানে আধুনিক পদ্ধতিতে সাবস্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। এতে ৬০ শতাংশ জায়গা কম লাগে। এসব জ্ঞান আহরণের জন্য আপনাদের দেশের বাইরে পাঠাই, কিন্তু আপনারা তা না করেশপিং করে চলে আসেন। আপনারা আন্তর্জাতিক জার্নাল পড়েন না। ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন না।

দীর্ঘদিন ধরে বলে আসার পরও চট্টগ্রামের সাবস্টেশন, ক্যাবল ও ট্রান্সফরমার ভূগর্ভস্থ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নসরুল হামিদ।

চট্টগ্রামে কেন সিস্টেম লস কমে না তা জানতে চেয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ কমলেও চট্টগ্রামে তা হয়নি। চট্টগ্রামের পাঁচ শতাংশ বিদ্যুৎ যায় কোথায়? আপনারা কি সিস্টেম লস কমাতে চান না? আপনাদের অনীহার কারণ কী? মানুষ বুঝবে এ পাঁচ শতাংশ এখানে দুর্নীতি হয়।

 

পাঠকের মতামত: