ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফুটপাত নাকি মার্কেট!

futpatচট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতের অস্তিত্বও নেই! সব কটি সড়কের ফুটপাত যেন মার্কেট বনে গেছে। এসব ফুটপাত দখল করে মার্কেটের দোকানের মতো পসরা সাজিয়ে বসেছে হকার। ফলে পথচারীদের বাধ্য হয়েই হাঁটাচলা করতে হচ্ছে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট কিংবা রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহারি সব মার্কেটে বিকিকিনিয়েদের ভিড়বাট্টা লেগেই থাকে নিত্যদিন। এমন ভিড়বাট্টার মাঝখানে দেখা যায়, ফুটপাতে নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে হকার। নিম্নমানের পণ্যের পসরা সাজিয়ে নিম্নআয়ের ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের জনপ্রিয়তাও পায় ফুটপাতের হকার।

ফলে মানসম্পন্ন পণ্যের সঙ্গে নিম্নমানের পণ্যের এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলে বনেদি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের। এর পরও এতোদিন হকাররা ফুটপাতে হকারের মতো ব্যবসা চালিয়েছে।

এখন হকারদের সেই দিন বদলাচ্ছে। আগে ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজাত। এখন রীতিমতো ফুটপাতকেই মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে। পুরো ফুটপাত চলে যাচ্ছে হকারদের পেটে।

এখন আর ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে সড়কেই হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। সেখানেও স্বস্তি নেই। হাঁটার সময় হকারের হরেক রকমের শোর চিত্কার, ‘চাই চাই ল, বাঁছি বাঁছি ল ১০০ ট্যায়া’ কিংবা ‘এক দাম ৫০’, ‘এক রেট ১০০’। —এ ধরনের শোর-চিত্কারে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলে হকারদের।

নগরীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মোবাইল ফোনের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে, শার্ট-প্যান্টসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের পসরা সাজানো হয়েছে। ব্যস্ত রাজপথের এক স্থানে কিছু জুতা সেন্ডেল সাজিয়ে বসে পড়েছে হকার।

নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিউমার্কেট মোড়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের সামনের সড়ক, নূপুর সিনেমা হল, মিউনিসিপাল স্কুলের সামনে, জলসা মার্কেট, আমতল, স্টেশন রোড, জুবিলী রোড, শাহ আমানত মার্কেট এবং জিপিও মোড় ছাড়িয়ে গেছে হকারদের মার্কেট।

কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হকার্স লীগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার সমিতি ও চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতি। এই তিন সংগঠন মিলে অন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে। সেটির নাম চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশন। পুরো নগরীতে এই হকার সমিতির বিস্তৃতি থাকলেও নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ফুটপাতে বসানো হয়েছে প্রায় তিন হাজারের বেশি হকার। তাদের কাছ থেকে সমিতির ব্যানারে দৃশ্যমান দৈনিক ১০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তোলা হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বিপুল পরিমাণ এই চাঁদার ভাগ যায় সমিতিরগুলোর নিয়োগ দেওয়া কিছু লোকজনের পকেটে। বাকি টাকা বিদ্যুৎ বিল, পুলিশ, রাজনৈতিক দলের নেতা-ক্যাডার এবং সমিতির নেতাদের পকেটে। প্রতিদিন লাখো টাকার বাণিজ্য চলে থলে থলে।

আবার সেই টাকার ভাগ জ্যামিতিক হারে বাড়ে রমজান মাসের আগে। প্রতিবছর রমজান মাস কেন্দ্র করে হকারদের ভাসমান দোকানগুলোর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার কিংবা তার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হয়।

এসব ফুটপাতের দোকানের কারণে যানজট সৃষ্টি, পথিকদের চলাচলে সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা হলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। ২০১৫ সালে নগর পুলিশের তত্কালীন কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল নগরীর বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে পারেননি। এর আগে ওয়ান-ইলাভেন সরকার আমলেও ওই এলাকার হকারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।

নিউমার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা দীর্ঘদিনের পুরনো। কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যা হচ্ছে। কারণ, ফুটপাত পুরোটা দখল হয়ে গেছে। সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কেটের প্রবেশমুখগুলো হকারদের দখলে যাওয়ায় ক্রেতারা আগের মতো মার্কেটমুখো হচ্ছে না। বেশির ভাগ অবস্থাসম্পন্ন রুচিশীল ক্রেতা হকারদের শোর-চিত্কারে কানে আঙুল দিয়ে মার্কেট পর্যন্ত আসতে পছন্দ করছেন না। তারা অন্য মার্কেটের দিকে ঝুঁকছে। অথচ, চট্টগ্রামের অভিজাত অনেক মার্কেটের চেয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মার্কেটে তুলনামূলক কম দামে মানসম্পন্ন পণ্য পান ক্রেতারা।

হকার এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হকার সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে সরকার দলীয় লোকজন। তারা কৌশলে সমিতির কার্যক্রম চালায়। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিএনপি সরকার আমলে থাকে বিএনপিপন্থীরা। বর্তমানে মেট্রোপলিটন হকার সমিতির সভাপতি পদে আছেন আওয়ামী লীগপন্থী নেতা মিরন হোসেন আর সেক্রেটারি পদে আছেন বিএনপিপন্থী জসিম উদ্দিন। মিরন হোসেন আবার হকার ফেডারেশনেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাত দখলের বিষয়ে মিরন বলেন, ‘নিউ মার্কেটে হকাররা সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করছে। সমিতি মাত্র দৈনিক ১০ টাকা হারে নিয়ে সমিতির কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশাসন হকারদের সহযোগিতা করছে। ’

নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২নং গেট, চকবাজার, কাজির দেউরী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, লালদীঘির পাড়, জুবলি রোড, নিউমার্কেট, বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড, আগ্রাবাদ বাদামতলসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত ও সড়ক দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে হকাররা।

দিনে ১০০ মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা!

নগরীর ফুটপাতে হকারদের তিনটি সংগঠনের অধীনে হকার আছে প্রায় ১২ হাজার। এর বাইরে প্রায় তিন হাজার হকার রাজপথ দখল করে ব্যবসা করছে। এসব হকারের মধ্যে একটি বড় অংশ দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিকে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় পাতিনেতা ও সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায় করছে।

আগ্রাবাদের হকাররা জানান, বছরের শুরু থেকে আগ্রাবাদের যুবলীগ নামধারী নেতা আলাউদ্দিন আলো ও তাঁর ক্যাডাররা হকারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এর পর হকারদের পক্ষে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আলোকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এখনো তিনি কারাগারে আছেন। তবে তাঁর ক্যাডার বাহিনীর সদস্য মিঠুন ও আজিজ হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। চাঁদা না দিলে হকারদের মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার ও নষ্টের হুমকি দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে হকার ফেডারেশনের সভাপতি মিরন হোসেন বলেন, ‘চাঁদাবাজরা হকারদের অতিষ্ঠ করে তুলছে। এই কারণে হকাররা লাঠি ও বাঁশি রাখা শুরু করেছে। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হকাররা বাঁশি বাজালে অন্যরা লাঠি হাতে এগিয়ে আসবে। চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করবে। ’

কিন্তু মাঠপর্যায়ের হকাররা বলছেন, তাঁরা প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন। ২০ টাকা, ৫০ টাকা কিংবা ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় তাঁদের কাছ থেকে। সমিতি, রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাত্রা আরও বেড়েছে বলে হকাররা জানিয়েছেন।

হকারদের দখল থেকে ফুটপাত কেন মুক্ত করা হচ্ছে না জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহেও দুই প্লাটুন পুলিশ নিয়ে সড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ চলে আসার পর তারা পুনরায় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে পড়ছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘রমজান মাসে যাতে সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন হয়, সেই লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। ’ হকারদের কাছ থেকে পুলিশের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ আমাকে দেয়নি, অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

হকারদের জন্য মেয়রের নীতিমালা আলোর মুখ দেখবে কবে?

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর হকারদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে একটি নীতিমালা তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় মেয়র বলেছিলেন, ‘হকারদের একটি নীতিমালায় আনার জন্য বারবার হকার সমিতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ঈদের পর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ’

২০১৬ সালের ঈদের পর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ার একবছর পার হয়ে গেলেও সেই নীতিমালা আলোর মুখ দেখেনি।

মেয়র বলেছিলেন, ‘হকারদের বিকেল ৫টা বা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে। দিনে কোনো হকার সড়ক কিংবা ফুটপাতে থাকবে না। এতে সকাল থেকে সন্ধ্যা স্কুল-কলেজ এবং অফিসগামী মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। ’

তাঁর ভাষায়, ‘চট্টগ্রামকে বিশ্বের দরবারে ক্লিন ও গ্রিন সিটি হিসেবে উপস্থাপন করতে এই নীতিমালার বিকল্প নেই। ’

ওই নীতিমালায় হকাররা কে কোন এলাকায় কীভাবে ব্যবসা চালাবে, তা নির্ধারণের কথা ছিল। নীতিমালার বাইরে থাকা কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। নির্দিষ্ট স্থানে মালামাল বিক্রির পর নির্দিষ্ট সময়ে হকার চলে যাবে। কোনো অবস্থাতেই ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে পারবে না।

হকারদের জন্য নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে হকার ফেডারেশনের সভাপতি মিরন হোসেন বলেন, ‘গত বছর মেয়র হকারদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা কয়েক দফা আলোচনায় বসেছি। কিন্তু নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি। অন্তত ২০ হাজার হকারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার হকার জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। ’

হকারদের জন্য নীতিমালা তৈরির ঘোষণা দেওয়ার একবছর পরও কেন তা বাস্তবায়িত হয়নি? এ প্রসঙ্গে কথা বলতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে গত সোমবার একাধিকবার ফোন করা হয়। পরে তাঁর মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তাও পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। তাই হকার নীতিমালার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রামের ফুটপাত পথচারীবান্ধব নয়

প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, নগর পরিকল্পনাবিদ

চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাত পথচারীবান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যানবাহন চলাচলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ফুটপাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই এখানকার ফুটপাত এখনো জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি। ’

দেশের রাজশাহী মহানগর এবং পাশের দেশ ভারতের কলকাতার উদাহরণ টেনে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আলী আশরাফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কলকাতা ও রাজশাহীতে ফুটপাত রয়েছে ১৫ থেকে ২০ ফুট। অথচ আমাদের চট্টগ্রামে ফুটপাত তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট! যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম। কিছু এলাকায় তো মাত্র দেড় ফুট ফুটপাত!’

আর যা আছে তার পুরোটাই হকারদের দখলে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের হাঁটার কোনো ফুটপাত নেই। ফুটপাতের কিছু অংশ পাশের দোকানের দখলে। আর বাকিটা দখলে নিয়েছে হকার। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে মূল সড়কে। ফলশ্রুতিতে ঘটছে দুর্ঘটনাও। ’

চট্টগ্রামে ফুটপাত কমপক্ষে ১০ ফুট রাখতে হবে জানিয়ে আলী আশরাফ বলেন, ‘এর তিন ফুট হকার ও দোকানদার দখল রাখলেও মানুষের হাঁটার জন্য থাকবে আরো সাত ফুট। ’ তবে তাঁর সাফ কথা, ফুটপাত পথচারীবান্ধব করতে হলে অবশ্যই হকার উচ্ছেদ করতে হবে। ইদানীং ফুটপাতে ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটরসাইকেল-এমন মন্তব্য করে প্রকৌশলী আশরাফ বলেন, ‘যেখানে মানুষের হাঁটার জায়গা নেই, সেখানে কিছু কিছু এলাকার ফুটপাতে চলে মোটরসাইকেল। তাও আবার বেপরোয়াগতিতে। মাঝেমধ্যে এগুলো দুর্ঘটনাও ঘটাচ্ছে। ’

হকারদের জন্য নীতিমালা জরুরি

মিরন হোসেন, সভাপতি, চট্টগ্রাম হকার ফেডারেশন

মেয়র ঘোষিত ‘ক্লিন ও গ্রিন সিটি’র পক্ষে অবস্থান হকারদের। তাঁরাও সুন্দরভাবে নীতিমালার মধ্য থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান। আবার অনেকে আছেন ঠেলাগাড়ি কিংবা ভ্যানগাড়ি নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করছেন। এটা তো ঠিক না। সবকিছুর একটি নীতিমালা থাকা দরকার। যে যার মতো করে ব্যবসা করায় যানজট হচ্ছে, মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

হকারদের জন্য নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে এসব বললেন চট্টগ্রাম হকার ফেডারেশনের সভাপতি মিরন হোসেন। তিনি বলেন, ‘হকাররাও মানুষ। তাঁদেরও সংসার আছে। জীবিকার তাগিদেই ক্ষুদে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ’

সিটি মেয়র হকারদের জন্য নীতিমালা তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরাও হকার সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের কিছু দাবি ছিল। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন প্রদত্ত পরিচয়পত্র ছাড়া অন্যরা হকারি ব্যবসা করতে পারবে না, সড়কের যত্রতত্র ভ্যান বা ঠেলাগাড়ি নিয়ে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না। হকাররা প্রতিমাসে সিটি কপোরেশনকে ৩০০ টাকা হারে ট্যাক্স দিতে প্রস্তুত। এই টাকায় হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘ফুটপাতে পেটের দায়ে হকাররা ব্যবসা করে। কিন্তু সেখানে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজদের উৎপাত। যখন তখন হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। এতে হকাররা জীবননাশের শঙ্কায় ভোগে। এটা প্রশাসনকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ’ কালের কন্ঠ

পাঠকের মতামত: