ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

গ্রিক মূর্তি না সরালে আমরা আবার রাস্তায় নামবো -হেফাজতে ইসলাম

hc.প্রেসবিজ্ঞপ্তি ::

আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানের আগেই গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি অপসারণের আহ্বান জানিয়ে হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আজ বৃহস্পতিবার এক যুক্তবিবৃতি দিয়েছেন।

 বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের ওলামায়ে কেরামের কাছে হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমরা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানের আগেই সেটি অপসারণের জোর দাবি জানাই। প্রধান বিচারপতির কাছেও আমাদের দাবিÑ বৃহত্তর তৌহিদি জনতার চাওয়াকে গুরুত্ব দিন এবং দেশে এই ইস্যুতে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য মূর্তি অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় যথাসময়ে মূর্তি না সরালে আমরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।

 বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, গোঁড়া সেকুলার মৌলবাদী প্রগতিশীলরা অজ্ঞতাপ্রসূত বলছেন যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য নাকি এক নয়! অথচ বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের ৯২৯ নং পৃষ্ঠায় ‘প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি বানানোর কাজ’কে ভাস্কর্য বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘ভাস্কর’ থেকে ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি এসেছে। ভাস্কর-এর অর্থ: সূর্য বা অগ্নি। অন্যদিকে, ‘প্রস্তরাদি থেকে যিনি মূর্তি নির্মাণ করেন’ তাকেও ভাস্কর বলা হয়েছে উক্ত অভিধানে। এছাড়া বাংলা একাডেমীর ইংরেজি-টু-বাংলা অভিধানে ভাস্কর্যের ইংরেজি শব্দ ‘স্কাপচার’-এর বাংলা অর্থ করা হয়েছে এভাবে: ‘মূর্তি/প্রতিমা গড়া বা খোদাই করা’। সুতরাং যারা এতদিন ধরে বলছেন যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক জিনিস নয়, তারা প্রকৃতপক্ষে স্যুডো-ইন্টেলেক্ট তথা মিথ্যা বুদ্ধিবৃত্তির বেসাতি করেছেন মাত্র!

 তারা বলেন, আমরা আগেও বলেছি, শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যকলার বিরুদ্ধে আমরা নই; বরং মানুষের শিল্পবোধ ও মননশীলতার উন্নয়নে এগুলোর গুরুত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। আপনারা ইসলামী শিল্পকর্মের ইতিহাসের দিকে তাকান: আগ্রার তাজমহল, জেরুজালেমের ডোম অফ দ্য রক, স্পেনের কর্ডোভায় খোদাইকৃত মুঘীরা কৌটা, কায়রোতে সেন্ট লুইয়ের ব্যাপ্টিস্টেয়ার ইত্যাদিÑ এগুলো মুসলমানদের কর্তৃক বিশ্বনন্দিত ইসলামী শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এছাড়া বিগত ২০১৫ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মুসলিমদের শিল্পকর্ম ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেজন্য দুটো গ্যালারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে।

 তারা আরো বলেন, তবে মূর্তি বা প্রতিমা নির্মাণ ব্যতীত এবং ইসলামের বিশ্বাসব্যবস্থা তথা তাওহিদ ও ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যকলায় ইসলামের আপত্তি নেই; কাজেই, আমাদেরও কোনো আপত্তি থাকতে পারেনা। কিন্তু পাশ্চাত্যের মডার্নিজম তথা আধুনিকতাবাদ এবং ইউরোপীয় খ্রিস্টীয় সভ্যতার আলোকে ইসলাম তার শিল্পবোধ, নান্দনিকতাবোধ ও কলাজ্ঞান পরিমাপ করেনা। সুতরাং ইসলাম প্রাচীন মূর্তিকেন্দ্রিক পৌত্তলিক জাহেলিয়াতকে শিল্পের নামে উপস্থাপন করারও বিরোধী, যেমন: আমাদের হাইকোর্টের সামনে রোমানদের প্রাচীন বিশ্বাসের অংশ ন্যায়ের দেবী থেমিসের মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন। এছাড়া বিগত শতকের প্রারম্ভে উদ্ভাসিত আধুনিকতাবাদপ্রসূত কলাকৈবল্যবাদÑঅর্থাৎ ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ স্লোগান তুলে মানব সভ্যতায় এক ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। জন্ম থেকেই আধুনিকতাবাদ মানুষের সহজাত ঈমান, সমাজব্যবস্থা ও ধর্মসহ মানব সভ্যতার সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করে এসেছে এবং অবাধ ভোগবাদ ও পুঁজিবাদের সহায়কে পরিণত হয়েছে। আমরা এই আধুনিকতাবাদকে মানব সভ্যতার সমকালীন বিপর্যয়ের মূল কারণ বলে মনে করি। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐহিত্য ও ইসলামী ভাবসম্পদ রক্ষার্থে এই মহামারী আধুনিকতাবাদ এবং এর বঙ্গীয় সেকুলার ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে গণলড়াইয়ে অংশ নিতে দেশের সকল স্তরের ঈমানদার নাগরিকদের আমরা আহ্বান জানাই।

 তারা আরো বলেন, গ্রিক দেবীমূর্তির পক্ষে যারা আজ ওকালতি করছেন, হাদিস অনুযায়ী পরকালে তাদের হাশর হবে মূর্তি প্রস্তুতকারীগণের সাথে। তাছাড়া এই মূর্তির সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। তাই এটির অপসারণ শতভাগ যৌক্তিক এবং এটি ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমানের দাবিও বটে।

পাঠকের মতামত: