ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন্দলের দায় কেন্দ্রের!

অনলাইন ডেস্ক :::

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে জিইয়ে থাকা অন্তঃকোন্দল এবং একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনার জন্য সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের দুষছেন স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন, এই অন্তঃকোন্দলের জন্য দায়ী তাঁদের ওপর কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া ১১০ জন নেতা। স্থগিত হওয়া ২৬১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ওই ১১০ জনের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা।

বিলুপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার অভিযোগ, তাঁদের নিয়ন্ত্রণে না থাকা ১১০ জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করছেন। এতে তাঁদের করার কিছুই নেই। এসব বিষয় তাঁরা ইতিমধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলমগীর টিপু গত শুক্রবার রাতে  বলেন, ‘আমাদের (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) মধ্যে কোনো দূরত্ব ও বিরোধ নেই। কেন্দ্র থেকে আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য গত বছর জুন মাসে ১৫১ সদস্যের কমিটির নাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাই। এতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন রয়েছে। ’

আলমগীর টিপু বলেন, ‘কিন্তু কেন্দ্র থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ও মতামত না নিয়ে প্রথমে ২০১ সদস্য; এর কয়েক দিন পর ২৬১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আমাদের পাঠানো তালিকা থেকে যে ১৫১ জন রয়েছেন তাঁরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণে আছেন। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া ১১০ জন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাঁরাই বিভিন্ন অপকর্ম করছেন ক্যাম্পাসে। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজন বলেন, ‘নেতৃত্বে আমরা (সভাপতি ও সম্পাদক) থাকলেও ১১০ জন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাঁদের সাংগঠনিক করতে। কিন্তু পারিনি। তাঁরা বিশৃঙ্খলা করেই যাচ্ছেন। এতে সংগঠন, আমাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর দায়ভার আমরা কেন নেব?’

এক প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় তারা (১১০) আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধ করলেও কেন্দ্র থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গত বৃহস্পতিবার রাতে পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে। পুরো বিষয়টি আমরা (সভাপতি ও সম্পাদক) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে অবহিত করা হয়েছে। ’

ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা আরো অভিযোগ করেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অতীতে ছাত্রলীগের এত বড় কমিটি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ১৫১ সদস্যের হওয়ার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ২০১ সদস্যের। কিন্তু নিয়ম না মেনেই এখানে ২৬১ সদস্যের বিশাল কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র থেকে। বড় কমিটির কারণেই আমাদের যত সমস্যা। ’

তবে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া ১১০ জনের কারণেই বিশৃঙ্খলা হয়েছে—এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘এঁদের (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) অভিযোগ মূল্যহীন। তাঁরা এখন সাবেক। তাঁদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ’

এ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগ তাদের (স্থগিত হওয়া কমিটি) কোনো দায়ভার নেবে না। এ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত। তাদের নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। ’

একই বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় অন্তঃকোন্দল ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে ২০১৪ সালের জুনে ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। এর প্রায় ১৪ মাস পর ২০১৫ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে মো. আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়ালে দুই সদস্যের এ কমিটিও স্থগিত করা হয়।

এরপর গত বছরের ২২ জুলাই টিপু সভাপতি ও সুজনকে বহাল রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামে এসে ছাত্রলীগ নেতাদের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর কয়েক দিন পর আরো ৬০ জন বাড়িয়ে ২৬১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর কিছুদিনের জন্য সংকটের সুরাহা হলেও পরে আবার সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর ওই রাতেই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। কালের কণ্ঠ

পাঠকের মতামত: