ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

যুবলীগ নেতাকে দিনদুপুরে কুপিয়ে, রগ কেটে হত্যা

amirকুমিল্লা প্রতিনিধি ::: কুমিল্লার দাউদকান্দিতে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রাজনকে (৩৫) দিনদুপুরে কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত। গতকাল শনিবার উপজেলা সদরের বলদাখাল রাস্তার মোড়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত যুবলীগ নেতা আমির দাউদকান্দির কাজিরকোনা গ্রামের দুলাল মুন্সির ছেলে। তিনি উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন আমির। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। আমিরকে হত্যার ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দাউদকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদ্‌যাপনের প্রস্তুতিসভায় যোগ দিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমির বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে হেঁটে বলদাখাল রাস্তার মোড়ে পৌঁছলে একদল মুখোশধারী দুর্বত্ত তাঁকে ঘিরে ফেলে। তিনি পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। দুর্বৃত্তরা তাঁকে চাপাতি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এ ছাড়া হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত মাংস কেটে ফেলে। আমিরের চিত্কার শুনে পথচারীরা ছুটে আসে এবং তাঁকে উদ্ধার করে থানার সমানে নিয়ে যায়। পরে দলীয় লোকজন সকাল ১১টার দিকে তাঁকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা আমিরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গৌরীপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আল-আমিন মিয়াজী জানান, যুবলীগ নেতা আমির হোসেন রাজনের হাত-পায়ের রগ এবং হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত মাংস কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শত্রুতায় জড়িয়ে পড়ায় এক সন্তানের জনক আমির গ্রামের বাড়ি ছেড়ে গৌরীপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। প্রায় এক বছর আগে দাউদকান্দিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং গ্রামের বাড়ি কাজিরকোনায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘাতের পর তিনি ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন পর আবার দাউদকান্দি ফিরে আসেন এবং যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন এবং গৌরীপুরে চলে আসেন আমির।

নিহতের বড় ভাই দাউদকান্দি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে বিধায় তার কিছু শত্রু রয়েছে। ওই সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছে সে। আজ দলীয় সরকারের আমলেই আমার ভাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ’ বিল্লাল হোসেন তাঁর ছোট ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান।

দাউদকান্দি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমির হোসেন রাজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রাথমিক তদন্তে জেনেছেন। খুনিদের ধরতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। ওসি আরো জানান, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত দুই মাসে দাউদকান্দি উপজেলায় প্রকাশ্য দিবালোকে জোড়াখুনসহ চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

আমির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। ’ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হেলাল মাহমুদ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। ’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবিব চৌধুরী বলেন, আজ রবিবার আমির হোসেন রাজনের জানাজার পর দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদসভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: