ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে পাহাড়, হারিয়ে যাচ্ছে গাছ গাছালি ও বন্যপ্রাণি ।। জুমের আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত সীতাকুণ্ডের পার্বত্য ভূমি

pahar..লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুন্ড

সীতাকুন্ডের সুবিশাল পার্বত্য ভূমিতে জুম চাষ আশংকাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পাহাড়ে এসব জুম চাষিরা আবাদ শুরু করায় তাদের অস্ত্রের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের পার্বত্য ভূমি। ফলে দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে পাহাড় আর হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি গাছগাছালি ও বন্যপ্রাণি।

নথিপত্রে দেখা যায়, উত্তরে বড়দারোগারহাট থেকে দক্ষিণে সলিমপুর পর্যন্ত সমগ্র সীতাকুন্ড উপজেলাটির আয়তন ৩৭ কিলোমিটার। এক সময় এ অঞ্চলের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিল্প কারখানা ও বসতবাড়ি বাড়তে থাকায় আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে ফসলি জমি। এতে দিশেহারা অনেক কৃষক শেষ সম্পদ মনে করে পার্বত্য ভূমিকেই কৃষি জমি হিসেবে ব্যবহার করে সেখানে চাষাবাদ শুরু করেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সীতাকুন্ডের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ বিভিন্ন প্রকার চাষাবাদে জড়িত। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সমতল ভূমিতে থাকা নিজস্ব কৃষি জমিতে ফসল ফলালেও অনেকেই আবার পাহাড়ি ভূমিতে চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। তবে পাহাড়ে কত সংখ্যক কৃষক চাষ করে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগেও।সরেজমিনে উপজেলার বড়দারোগারহাট, ছোটদারোগারহাট, বাড়বকুন্ড, কুমিরা প্রভৃতি এলাকার পাহাড়ে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এসব পাহাড়ে জুম চাষির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয়রা জানান, একসময় শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক পাহাড়ি আদিবাসী নিজেদের জীবিকার প্রয়োজনে সেখানে চাষ করে চাহিদা পূরন করত। কিন্তু সময়ের সাথে উপজেলার সমভূমিতে মাত্রারিক্তহারে বসতবাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকলে ফসলি জমি কমতে থাকে। এতে নিঃস্ব কৃষকরা পাহাড়ের খাস ভূমিতে চাষ শুরু করে। আর এখন তো সীতাকুন্ডে উৎপাদিত করলা, বরবটি, শসা, কাকরোল, পেঁপে, ঝিঙ্গে, আদা, হলুদ প্রভৃতি ফসলের বেশিরভাগই আসে পাহাড় থেকে।

বড় দারোগারহাটের চাষি রহমত আলী জানান, তিনি প্রায় ২০বছর ধরে পাহাড়ের গায়ে চাষ করে আসছেন। করলা, ঝিঙ্গে, কাঁকরোল, পেপে, বাতাবী লেবুসহ আরো কয়েক প্রকার সবজি চাষ করেন তিনি। তার মতে উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি চাষি জুম চাষ করে থাকেন। এভাবে জুম চাষ করতে গিয়ে পাহাড় কেটে ক্ষত বিক্ষত করার কথা স্বীকার করলেও এ চাষি বলেন, ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে পাহাড় কাটতে হয়। এতে প্রয়োজনীয় গাছপালা নষ্ট হচ্ছে কিনা কিংবা বন্যপ্রাণি আশ্রয় হারাচ্ছে কিনা তা দেখলে তার মত চাষিদের চলে না। একই কথা বলেন, বেশিরভাগ চাষিই। চাষিরা দাবি করেন, জুম চাষে পাহাড়ের মাটি ঝরলেও বর্তমানে পাহাড়ই সীতাকুন্ডে উৎপাদিত ফসলের মূল উৎস।

অন্যদিকে এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা দৈনিক আজাদীকে জানান, পাহাড়ের শরীর কেটে এভাবে জুম চাষ খুবই ক্ষতিকর। এতে পাহাড় ক্ষয়ে গিয়ে ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কৃষকদের সহযোগিতা করাও সম্ভব নয়। তবে তিনি পাহাড়ে হলুদ, আদা জাতীয় ফসল চাষ করা যায় বলে মন্তব্য করেন। এসব চাষ বিষয়ে কৃষক পরামর্শ চাইলে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানান।

 

পাঠকের মতামত: