ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অসামাজিক কার্যকলাপ ফয়’স লেকের গেস্ট-রেস্ট হাউসে

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আওতাধীন ফয়স’ লেক এলাকার গেস্ট-রেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলোতে হরদম চলছে অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা অপরাধ। এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ঘোর আপত্তি সত্বেও এসব রেস্ট হাউসে মাদক ও দেহব্যবসা বন্ধে স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় অনেকটা নির্বিঘেœই পরিচালিত হচ্ছে এসব রেস্ট ও গেস্ট হাউস। প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে এসব গেস্ট ও রেস্ট হাউসে অভিযান চালানো হলেও এতে কার্যকর ফল মিলছে না।
ফয়স’ লেক এলাকার একটি হাউজিং সোসাইটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক সড়কে ছয়টি রেস্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন থেকেই রমরমা দেহব্যবসা চলে আসছে। এরচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে- এসব হোটেলগুলোতে পুরুষ সহপাঠী কিংবা পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল-কলেজের মেয়েরা ‘আড্ডা’ দিতে আসে। ঘণ্টা হিসেবে তারা হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে একান্তে সময় কাটায়। আবাসিক এলাকার ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ফয়স’ লেক এলাকায় একাধিক হোটেল রয়েছে যেগুলোতে রীতিমতো মাদকের আখড়া বসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, বাসায় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মাসখানেক আগে ফয়স’লেক সড়কের একটি রেস্ট হাউসে তার এক নিকটাত্মীয়ের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। রাতে হোটেল কক্ষে অচেনা এক মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতিকারীরা। তিনি বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ছাড়া দুষ্কৃতিকারীরা এই ধরণের কাজ করতে পারে না। কিন্তু মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি নিয়ে তিনি আর উচ্চবাচ্য করেননি। ওই শিক্ষকের দাবি, জিম্মি করে এভাবে পর্যটকদের হাতিয়ে দেয়ার ঘটনা রেস্ট ও গেস্ট হাউসগুলোতে অহরহ ঘটে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
ফয়স’লেক এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে এলাকায় সম্মানজনকভাবে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযানের ফলে মিডিয়ায় যেসব খবর আসে তা শুনে-পড়ে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। বাসিন্দাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এসব গেস্টহাউস-রিসোর্ট পরিচালনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা কিংবা ছত্রছায়া রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষা সহযোগিতার কথা প্রায় ওপেন সিক্রেট। তাদের সহযোগিতায় এসব গেস্ট হাউস-রিসোর্টগুলোতে চলছে অপরাধযজ্ঞ!
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ৬/৭টি হোটেল-রিসোর্টগুলোকে অপরাধমুক্ত করতে একাধিকবার পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। লিখিত অভিযোগ করেছি। এরফলে কেবিন ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। প্রশাসন আরও আন্তরিক হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য। তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা সংলগ্ন মাইট্টা গলিতে মাদক ব্যবসার অভিযোগ পাওয়ার পর পরই পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে তা বন্ধের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। জানতে পেরেছি, রবিবার রাতেই পুলিশ ওই জায়গায় মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রায় মাস দেড়েক আগে ফয়স’লেক এলাকার রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে ভ্রাম্যমান অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, পুলিশ ফোর্স কম থাকায় আমরা দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট একদিনে তিনটি রেস্ট হাউসে অভিযান চালাই। ২৩ জোড়া তরুণ তরুণীকে আলাদা আলাদা কক্ষ থেকে আটক করি। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও আটকদের মধ্যে দশম শ্রেণীতে পড়ে এমন ছাত্র-ছাত্রীকেও পেয়েছি। ভবিষ্যত চিন্তা করে জেল জরিমানা না করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেই। তিনি আরও বলেন, শুধু অসামাজিক কার্যকলাপই নয় মাদকসেবীও ছিল আটককৃতদের মধ্যে। রেস্ট ও গেস্টগুলোতে স্থায়ীভাবে অসামাজিক কার্যকলাপমুক্ত করতে করণীয় কি, জানতে চাইলে তাহমিলুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের হোটেল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের উপর চাপ রাখতে হবে। পর্যটন এলাকা হওয়ায় সামাজিকভাবে এ ধরণের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িতদের প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্য বিকল্প খুব একটা কার্যকর হবে না।
দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যেসব গেস্ট হাউস ও রিসোর্টে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: