ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রিয়াজউদ্দিন বাজার এখন অপরাধীর স্বর্গরাজ্য!

Motor-Cycle-Pic-altaf-800x450অবৈধ ব্যবসা, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য সন্ত্রাসীদের হুমকি, কিছুদিন অন্তর লাশ পাওয়াসহ নানা অপরাধের কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দা-ছুরিসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। মাদক ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবাধ আনা-গোনা ও বিকাল ৪টা হতে গভীর রাত পর্যন্ত আবাসিক হোটেলে বসে মাদক সেবনের আসর। এসব কারণে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে এই বাজার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারের অলিগলিতে মোটরসাইকেল পার্কিং করে বাজারের ক্রেতাসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করা হয়। দোকানের সামনে মোটরসাইকেল না রাখার অনুরোধ জানালে কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০/১৫ জন এসে তাকে মারধর করা হয়। প্রতিদিন এই ঘটনা ঘটছে। কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পারে না। অভিযোগ রয়েছে সন্ত্রাসীরা গত তিনমাসে কমপক্ষে ত্রিশ জনেরও অধিক নিরীহ দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করেছে।
সম্প্রতি একটি রেস্ট হাউসের সামনে থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে রাত ১০টার দিকে পথচারীদের সামনে নগদ কয়েক লাখ টাকা ও মোবাইলসহ ধরে নিয়ে যায়। সাম্প্রতিক বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনা, তামাকুমন্ডি লেইনের জলসা মার্কেটের তালাবদ্ধ দোকান হতে লাশ উদ্ধার, রহমান মার্কেটের একটি ঘর হতে লাশ উদ্ধার, হোটেল আল-সালামত হতে লাশ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় বুঝা যায় এই বাজারে কি পরিমাণ অরাজকতা চলছে।
হাজারো দোকান মালিক ব্যবসায়ী ও সচেতন কর্মচারীদের দাবি এই বাজারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিক। জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আবাসিক হোটেলগুলি প্রশাসনের পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে প্রতিটি হোটেল দিনে অন্তত একবার চেক করার দাবি জানান তারা। ট্রাফিক সার্জেন্টদের কড়া নির্দেশ দিয়ে বাজারের ভেতর রাস্তায় বেপরোয়াভাবে পার্কিং করে রাখা মোটর সাইকেলগুলি ক্রেন দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে সর্বোচ্চ জরিমানা করার দাবি জানান তারা। মাদক ব্যবসাকে বাজার থেকে নির্মূলের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঐতিহ্যবাহী রিয়াজ উদ্দিন বাজার দেশের শতাধিক বছরের প্রাচীন একটি বাজার। এই বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এলাকার ব্যবসায়ী দোকান মালিকগণ অধিকাংশই পুরুষাণুক্রমে জাত ব্যবসায়ী। প্রয়োজনীয় পণ্য এখানে আমদানি হয়ে পর্যায়ক্রমে ক্রেতাদের নিকট সরাসরি এবং বিভিন্ন মার্কেটের দোকানের মাধ্যমে এখান থেকে সরবরাহ হয়। এই বাজারে দৈনিক শতকোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে তা শতভাগ বৈধ ব্যবসা নয়। জানা-অজানা অনেক ধরণের অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠে সন্ত্রাসী দল। এ বাজারে মূলত ইয়াবার মত অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী দলের উদ্ভব হয়েছে। তারা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, প্রকাশ্যে যে কোন সময় যে কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর ও চাঁদা আদায়সহ হেন অপকর্ম নাই তারা করছে না। তারা প্রকাশ্য দা-ছুরি নিয়ে মহড়া দিয়ে বাজারে ত্রাস সৃষ্টি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী পূর্বকোণকে বলেন, সন্ত্রাসী জাহিদের নেতৃত্বেই একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে। তার অনুসারীদের হাতে বাজারের নিরীহ দোকান মালিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। তার আশ্রয়ে রয়েছে এই বাজারের অবৈধ ব্যবসায়ীরা। অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই সন্ত্রাসী দলের কারণেই শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজার এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। বাজারের হাজারো বৈধ দোকান মালিক ব্যবসায়ীর ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়েছে। অপরদিকে অবৈধ ব্যবসার প্রসার ঘটছে। ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন এখানে যার যা ইচ্ছে তা করছে। প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা কারো নজরে পড়ছে না কেন?
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ পূর্বকোণকে বলেন, তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জামায়াত-বিএনপি’র লোকজন তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি ইয়াবা ব্যবসা কিংবা চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত নন এমন দাবি করে বলেন, কেউ এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারবে না। বরং বাজারের পরিবেশ রক্ষায় তিনি বণিক সমিতিকে সহযোগিতা করেন। তার কোন অনুসারীও নেই বলে তিনি দাবি করেন।

পাঠকের মতামত: