ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কটি দুর্নীতিতে সুনাম হারাচ্ছে

মোঃ নিজাম উদ্দিন, ডুলাহাজারা :::sapari pak:
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সাফারী পার্ক কক্সবাজার জেলায় চকরিয়া উপজেলাধীন ডুলাহাজারাতে ৯০০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে দেশ-বিদেশে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও সম্প্রতি পর্যটকরা দ্বিতীয়বার পার্কটিতে আসার নামও নিচ্ছেন না। অভ্যন্তরীণ দীর্ঘ সময়ের অনিয়ম দুর্নীতিতে এই সাফারি পার্কের অস্তিত্ব এখন বিলিন হওয়ার পথে। প্রতিনিয়ত হুমকির মূখে পড়ছে জীব বৈচিত্র সহ বনজ সম্পদ। দিন দিন অরক্ষিত ও ক্ষুদ্র হতে চলেছে সাফারি পার্কের পরিধি।
সাফারী পার্ক এলাকার ভিতরের ছড়া খাল থেকে বালু উত্তোলন, নির্বিচারে বনজ বৃক্ষ নিধন সহ পশু পাখী (বন্যপ্রাণী) চুরির ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ছড়া খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ছোট ছড়া বিশাল খালে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে মূল্যবান গাছ পালা সহ ওই নদীতে ঢলে পড়ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে বন্যপ্রাণী (পশুপাখীর) আবাসস্থল। বৃক্ষ নিধনের ফলে পার্কের জীববৈচিত্রের ও পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানিরা দাবী করছেন পার্কের এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই সাফারি পার্কটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
পার্কের এ বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী টানা ১৪ বছর ধরে সাফারী পার্কে কর্মরত অনিয়ম দূর্নীতি ও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। উল্লেখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এলাকার বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী বাবুল দাশ গত ২৭ ডিসেম্বর দূদক চেয়ারম্যান, প্রধান বনসংরক্ষক সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
বাবুল দাশের অভিযোগে জানাযায় কুমিল্লার বাসিন্দা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম ফরেষ্ট একাডেমিতে পড়া লেখা করা কালিন সময়ে ছাত্র দলের ক্যাডার ছিলেন। বিএনপি সরকারের আমলেই এই সাফারি পার্কে নিয়োগপান ছাত্রদলের ক্যাডার মাজহারুল। দীর্ঘ ১৪ বছর একটানা এপার্কে কর্মরত থেকে অনিয়ম, দূর্ণীতি ও সরকারী সম্পদ লুট করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। পার্কের একাধিক উন্নয়ন কাজে তিনি অঘোষিত ভাবে ঠিকাদারী কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে পাগলির বিল মৌজার ১০ হেক্টর মূল্যবান বনজ বাগান কাঠচোরদের সাথে আতাত করে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয় চোরাই বালি ব্যাবসায়ীদের সাথে মাসিক ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে পার্ক এলাকার আওতাধীন পাগলিরবিল মৌজার ছড়া খালে ১০-১২ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত দিন বালি উত্তোলন করে পাচারে সহযোগিতা করছে ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম। এতে বনের গাছ বিলিন হচ্ছে, পাহাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে ছড়া খালে গর্তের সৃষ্টি হয়ে বড় খালে পরিণত হচ্ছে। তাছাড়া জীববৈচিত্রের ভারসম্য রক্ষার্থে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সৃজিত ১৫ হেক্টর বাগান ও বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি কাঠচোরদের হাতে। যা সরজমিনে তদন্ত করলে অসংখ্য গাছের মুথা পাওয়া যাবে। তিনি সাফারী পার্কের হরিণ, মরা বাঘের মাংস, চামড়া ও মাথার খুলি বিক্রি করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন পাচারকারীদের কাছ থেকে। বিগত বছরে পার্কের সীমানা বাউন্ডারি ও ড্রেন নির্মাণ কালে মাজহারুল, ইন্জিনিয়ার ও ইজারদারের সাথে চুক্তি করে এক চতুর্থাংশ কাজও যথাযত হয়নি। নির্মাণাধীন ড্রেনের অনেকাংশ ভাঙগলে এখনো লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ও গাছ পাওয়া যাবে বলে নির্মাণকালীন সময়ের একাধীক শ্রমিক জানান। এছাড়াও পার্ক এলাকার সামনে দর্শনার্থীদের জন্য সরকারী ভাবে ক্যান্টিন ইজারা দেয়া হলেও চটপটি, ডাব, ক্ষিরা সহ মৌসূমী ফলের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। এছাড়াও পার্কের সামনে পূর্ণবাসিত হওয়া লোকদের কাছ থেকেও তিনি মাসিক হারে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সাফারি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্বসানের জায়গা দখল করে দিবে বলে তাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে পার্কের কর্মচারীরা তার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছেনা।
উপরোক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অঞ্চলের অফিস আদেশ নং-৫৪, পিপি নং-২২.০১.০০০০.১০১.০৫.২০১৪.৩১১২ মূলে বন্যপ্রাণী অঞ্চল ঢাকায় বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখনো পর্যন্ত সাফারী পার্কে বহালতরবিয়তে চাকুরি করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে বণ্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্রগ্রামের একাধিক ডিএফও বদলী হলেও তিনি তাদের বদৌলতে এখনো রয়ে গেছেনে। বর্তমান ডিএফও গোলাম মওলা নাকি তার অনিয়ম, দূর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে পার্কের রক্ষনাবেক্ষন ভেঙ্গে পড়া নিয়ে ও বঙ্গবন্দুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে ।
এ ব্যাপারে জানতে বণ্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলার সাথে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করে ও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে সাফারী পার্কের ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অভিযোগ গুলো সত্য নয়। আমি নিজ ইচ্ছায় বদলী হতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাকে ছাড়ছেনা।

পাঠকের মতামত: