ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামা আওয়ামীলীগে বিদ্রোহের সুর

lama-photo-31-12-16মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা প্রতিনিধি ঃ

এক সময়ে পরিচ্ছন্ন ও আদর্শগত রাজনীতির রুল মডেল ছিল বান্দরবান। তারই ফসল হিসেবে বান্দরবান ৩০০নং আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে জননেতা বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। বান্দরবান রাজার মাঠে এক জনসভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির মডেল হিসেবে বান্দরবান আওয়ামীলীগকে দৃষ্টান্ত করেন। কিন্তু বান্দরবান রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র, দলের নেতা নির্বাচনে হাইব্রিট আওয়ামীলীগকে প্রাধান্য ও স্থানীয় নির্বাচনে নব্য আওয়ামীলীগ সুযোগ দেয়ায় দলীয় অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে বলে জানায় রাজনীতি বিশ্লেষকরা। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচংগ্যা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার, তৃণমূলে এই গ্রুপিং মূল কারণ হিসেবে দেখছে নেতাকর্মীরা।

তৃণমূলের অনেক কর্মীরা জানায়, সাবেক আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচংগ্যাকে দল থেকে বহিষ্কারের পিছনে সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান অন্তরালে কলকাঠি নেড়েছিল। ভাগ্য বিধাতা প্রসন্ন ছিলেন না বলে একই পথে তার নিজেকে দল থেকে বিতাড়িত হতে হল।

জেলা রাজনীতির এই অপছায়া পড়ার কারণে লামা উপজেলা আওয়ামীলীগে এখন চরম অস্থিরতা ও গ্রুপিং দেখা দিয়েছে। যার প্রকাশ্য রুপ পায় গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ইং বিজয় দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে লামার আওয়ামীলীগ বিজয় দিবস পালন করে। মূলধারায় নেতৃত্ব দেয় লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল আর বিদ্রোহী অংশে নেতৃত্ব প্রদান করে আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান। শীঘ্রই এই দ্বন্দের সমাধান করা না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে বড় খেসারত দিতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র চেয়েও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় জয়ের বড় বাধা হবে।

নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে লামা আওয়ামীলীগের এক প্রবীণ রাজনীতিবিধ বলেন, লামা আওয়ামীলীগের বর্তমানে ৬০ শতাংশ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিএনপি রাজনীতি থেকে এসেছেন। তাই তাদের আগের রাজনীতি মাঠের সহযোদ্ধাদের প্রতি এখনও আন্তরিকতা রয়েছে। এখন তাদের ডেকে এনে আওয়ামীলীগে বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব প্রদান করছে। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ইং লামা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী একজন উপজেলা শ্রমিকদলের নেতা, অন্যজন লামা পৌর বিএনপি ২নং ওয়ার্ড শাখার অর্থ সম্পাদক পদে এখনও আছেন বলে উপজেলা বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন। একইভাবে লামা উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ সহ অনেক সহযোগি সংগঠনের কমিটিতে নব্য ও হাইব্রিট আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব প্রদান করতে দেখা যায়। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা আবু মূসা ফারুকী এক সময়ে আওয়ামীলীগের জন্য আতংক ছিল। ২০০৩ সালে তার নেতৃত্বে লামা বিএনপি আওয়ামীলীগের অর্ধশত নেতাকর্মীর নামে ৩টি রাজনীতি মামলা করে হয়রানী করে। তখন আবু মূসা ফারুকী জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

তৃণমূলের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে দলের উপজেলা ও পৌর নেতৃবৃন্দের দূরত্ব আছে বলে এই নেতা দাবী করেন। আওয়ামীলীগের মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন লোক হঠাৎ করে ধনকুবে বনে গেছেন। কয়েকদিন আগেও যারা রিক্সায় চড়তেন আজ তারা দামী গাড়ীতে ঘুরাফেরা করেন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সজ্জিত বিলাসবহুল বাড়ী মালিক তারা। অনেকের শতশত একর পাহাড়ী বনায়ন, দোকান প্লট, হোটেলের মালিক। খবর নিয়ে জানা যায় অনেকে এই জ্ঞাত সম্পদের আয়কর দেয়না।

মুষ্ঠিমেয় এই কয়েকজন নেতারাই সকল টেন্ডার, উন্নয়ন কাজ, গাছ-বাশঁ ব্যবসা, ব্রিকফিল্ড, সমিল, ডিও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। দলীয় প্রভাবে এইসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে হঠাৎ করে পাহাড় সম এই সম্পদের মালিক হয়েছে তারা। আওয়ামী সমর্থকদের দাবী যারা ব্যাক্তি স্বার্থ থেকে দলীয় স্বার্থকে বেশী প্রাধান্য দেবে তাদের দলের নেতা নির্বাচন করা হউক।

পাঠকের মতামত: